ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ রেদোয়ান হাসান সাগরকে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করেছে প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই নগরীর সি কে ঘোষ রোড ছায়াবাণী সিনেমা হলের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
শনিবার (১৯ জুলাই) সকালে নগরীর সিকে ঘোষ রোড মহিলা কলেজের সামনে শহীদ সাগর চত্বরে প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার। পরে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজি আখতার উল আলম, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
এ সময় সাগরসহ গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন। এর আগে শুক্রবার রাত ১২টা এক মিনিটে মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শহীদ সাগর চত্বরে শ্রদ্ধা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া করা হয়।
শহীদ রেদোয়ান হোসেন (২৪) সাগর নগরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকার আসাদুজ্জামান মিয়ার ছেলে। সে জেলার ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অসুস্থ স্বজনের খোঁজ খবর নিয়ে বাসায় ফেরার পথে আওয়ামী লীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে পড়ে গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস বলেন, ১৯ জুলাই ময়মনসিংহের ইতিহাসে এক কালো দিন। সেদিন আমাদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে দমাতে গিয়ে সাগরকে শহীদ করা হয়েছিল। সাগরের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তার আত্মত্যাগ আমাদের বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লড়াইয়ে প্রেরণা যোগাবে।
শহীদ সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান আসাদ কান্না চেপে বলেন, ১৯ জুলাই ইতিহাসে এই দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ময়মনসিংহে প্রথম আমার ছেলে শহীদ হন সাগর। সব বাবা-মা চায় সন্তান ভালোভাবে বাঁচুক। আমি সে স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে যে আদর্শের জন্য প্রাণ দিয়েছে, তা কোনো দিন বৃথা যাবে না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই। একমাত্র সন্তানের শোকে আজ পাথর আমি। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কাঁদতেও পারি না। ছেলের ইচ্ছা ছিল ব্যাংকার হবে, পরিবারের অভাব ঘোচাবে। কিন্তু সবই আজ স্মৃতি।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ময়মনসিংহে প্রথম শহীদ কলেজছাত্র রেদোয়ান হাসান সাগরের সমবেদনা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। আমরা আজকে যে এই পজিশনে এসেছি, ওদের জন্যই এসেছি। তাদের সহযোগিতার জন্য সরকারিভাবে যা দরকার আমরা তাই করব।
মন্তব্য করুন