মেহেরেপুরের মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের ‘বিতর্কিত’ শিক্ষক নুরুল ইসলাম ওরফে নুরুল মাস্টার (৩৭) আবারও আলোচনায়। এবারের অভিযোগ—নিজ কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করেছেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ও তাঁতী লীগের নেতা হিসেবে নুরুল ইসলাম রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একাধিক মামলার আসামি হয়ে এবং নিয়মিত কলেজে অনুপস্থিত থেকে এখনো পর্যন্ত বহাল তবিয়তে কলেজের চাকরি করে যাচ্ছেন তিনি।
এরইমধ্যে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা মো. হানিফ গত ২১ জুলাই মুজিবনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদীর অভিযোগ, নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে অনুসরণ করত। গত ২০ জুলাই রাত আনুমানিক ৩টার দিকে দুই সহযোগীকে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাকে অপহরণ করেন তিনি।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘অভিযোগ মামলা আকারে রেকর্ড হয়েছে। আসামিকে ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।’
জানা গেছে, নুরুল ইসলামকে ঘিরে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। অনলাইন জুয়া, মানব পাচার ও তরুণদের বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার অভিযোগে তার নাম একাধিকবার উঠে এসেছে। এরইমধ্যে দৈনিক কালবেলার একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তাকে এ চক্রের ‘মূল হোতা’ বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষকতার আড়ালে অবৈধ আয়, দুর্দান্ত প্রতাপ আর অপরাধ জগতে পদচারণার অভিযোগ রয়েছে নুরুল মাস্টারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা মো. হানিফ আক্ষেপ করে কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এক অযোগ্য পিতা। অধম। আমার সন্তানকে যারা নিয়ে গেছে, তাদের বিচার এ দেশে হবে না। আমি দেশ ছেড়ে চলে যাব। কোনোদিন আমার সন্তানদের আর স্কুল কলেজে ভর্তি করব না। এ বিষয়টা নিয়ে আপনাদের নিউজ করার দরকার নেই।’
তবে সবশেষ অপহরণের ঘটনায় এবার কলেজ প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ ওমর খৈয়াম ঊষা বলেন, ‘কিছুদিন আগে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কালবেলায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে শোকজ করি। এখন ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে, যেখানে আমিও সাক্ষী। নৈতিকতার বিচারে এ ধরনের শিক্ষক আমাদের প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে না। তাকে সাত দিনের সময় দিয়ে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আলিম কালবেলাকে বলেন, ‘গত ২০ জুলাই রাতে ছাত্রী অপহরণের তথ্য পাওয়ার পরপরই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন