অঞ্জন রায়, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৬ বছর ধরে সেতুর নিচে জীবনের নির্মম যুদ্ধ

বরাক নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর নিচে বসবাস করছেন এই অসহায় পরিবার। ইনসেটে বৃদ্ধ আলাবর মিয়া। ছবি : কালবেলা
বরাক নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর নিচে বসবাস করছেন এই অসহায় পরিবার। ইনসেটে বৃদ্ধ আলাবর মিয়া। ছবি : কালবেলা

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাখা বরাক নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর নিচে বসবাস করছেন এক অসহায় পরিবার। সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ছুটে চলছে অসংখ্য ভারী যানবাহন—বাস, ট্রাক, লরি। আর নিচে চলছে জীবনের নির্মম যুদ্ধ।

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সেই ব্রিজের নিচে জীবন কাটাচ্ছেন ৭২ বছর বয়সী বৃদ্ধ মো. আলাবর মিয়া ও তার পরিবার।

সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর নিচে বসবাস করা এ পরিবারটির জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক মৃত্যুঝুঁকি। ছয় ফুটের মতো উঁচু-নিচু জায়গায় সামান্য পলিথিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি ঘর—সে ঘরেই স্ত্রী, সন্তান, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ মোট ১৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

বৃদ্ধ আলাবর মিয়া জানান, তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তার নেই নিজের কোনো জমি বা বাড়ি। আশ্রয়ের খোঁজে ২০০৯ সাল থেকে তিনি পরিবারসহ ব্রিজের নিচে বসবাস শুরু করেন। দিনরাত ভারী যানবাহনের শব্দে ঘুম ভাঙে তাদের। ছোট-ছোট শিশুদের ঘুমাতে কষ্ট হয়, সবসময়ই থাকে এক অজানা আতঙ্ক। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগ হয় চরম—ঘরে পানি ঢুকে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জীবন।

তিনি বলেন, জীবনের শেষ বয়সে একটি ঘরও জোটেনি। পরিবারের কেউ লেখাপড়া করতে পারছে না। অসুস্থ হলেও ওষুধ কেনার টাকা নেই। বাঁচার জন্য প্রতিদিন লড়াই করতে হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, অনেকবার স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো সরকারি ঘর বরাদ্দ পাননি তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা আল-মামুন বলেন, এইপরিবারটির অবস্থা দেখে চোখে পানি এসে যায়। এখনই সহযোগিতা না করলে হয়তো এই শিশুগুলোকে আমরা হারিয়ে ফেলব অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে।

সবুজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, এ পরিবারের প্রতিদিন খাদ্য সংকট থাকে। একবেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলা অনাহারে দিন কাটাতে হয় পুরো পরিবারকে। অসুস্থ হলে টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না।

এদিকে স্থানীয়রা এই অসহায় পরিবারের পাশে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন।

দেবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. বশির আহমদ জানান, পরিবারটি সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করলেও এখনো বরাদ্দ সম্ভব হয়নি। তবে তাদের বিষয়টি ইউপি ও প্রশাসনের নজরে রয়েছে, ভবিষ্যতে সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান বলেন, ‘পরিবারটিকে সরকারি বন্দোবস্তের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির ২ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার

প্রথমে কী দেখছেন বলে দেবে আপনি কীভাবে চিন্তা করেন

জাকসুর ১৬ হলের ভোট গণনা শেষ

খাবার ঘর ছোট? সমস্যা নেই, সাজান বুঝেশুনে

সালমানের পর গুলি চলল দিশার বাড়িতে

আমি জানি মিমির মুড সুইং কখন হচ্ছে: আবীর চ্যাটার্জি

‘গণআন্দোলনের প্রস্তুতি নিন, পরিবর্তনের সময় এসে গেছে’

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাশিয়ার পূর্ব উপকূল

গ্রুপ অব ডেথে টিকে থাকার লড়াইয়ে মুখোমুখি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা

দুর্গাপূজা শুরুর আগে বাড়ি থেকে এই ৪ জিনিস সরিয়ে ফেলুন

১০

জাকসু নির্বাচন / ১৫ হলের ভোট গণনা শেষ, একটার মধ্যে শেষ করার আশা

১১

তৃতীয় দিনের মতো চলছে জাকসু নির্বাচনে ভোট গণনা

১২

সাগরে লঘুচাপ, টানা বৃষ্টি নিয়ে নতুন বার্তা আবহাওয়া অফিসের

১৩

সাতসকালে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

১৪

ফিলিস্তিন থাকবে না, এই ভূমি আমাদের : নেতানিয়াহু

১৫

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১৬

স্লোগানের রাজনীতির দিন শেষ : মুন্না

১৭

ডাকসু নির্বাচনে জয়ীদের মালয়েশিয়ার ছাত্রসংগঠন পিকেপিআইএমের অভিনন্দন

১৮

পূর্বজন্মে আমি বাঙালি ছিলাম: বিদ্যা বালান

১৯

বায়ুদূষণে শীর্ষে কিনশাসা, ঢাকার অবস্থান কত

২০
X