অবৈধভাবে সভাপতি মনোনয়ন ও বিধিবহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ যমুনা ডিগ্রি কলেজটি। এসবের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
এসব কারণে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে কলেজের সভাপতি সরকারি নিয়মে নয়, নিজের ইচ্ছেমতোই কলেজ চালানোর কথা বলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিক্ষক জাকির হোসেনসহ অন্য শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে জানা যায়, নীতিমালায় এক কলেজের শিক্ষক অন্য কলেজের সভাপতি হওয়ার বিধান না থাকলেও বেলকুচির দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহাদত হোসেনকে এ কলেজের সভাপতি করা হয়েছে।
তিনি তথ্য গোপন করে নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে সভাপতি হয়েছেন। আর অবৈধভাবে সভাপতি হয়েই অনিয়মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। সম্প্রতি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অন্য কলেজে যোগ দেওয়ায় পদটি শূন্য হয়। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ৫ জ্যৈষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙিয়ে ৬ষ্ঠতম কনিষ্ঠ শিক্ষক আব্দুল আওয়ালকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। দুটি কর্মচারীর পদে নিয়োগে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে একজনকে কলেজের গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য করা হয়েছে। আর বাকি দুজন বিদ্যুৎসাহী সদস্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদনে নেওয়ার বিধান থাকলেও সভাপতি তার ইচ্ছেমতো পছন্দের দুজনকে মনোনীত করেছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনীত করার বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের ইচ্ছায় পছন্দের ৩ শিক্ষকের নাম দিয়ে রেজুলেশন করেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সভাপতি হয়েই শাহাদত হোসেন কলেজে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে শিক্ষকদের ভয়ভীতিসহ হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
কলেজে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিধিমালা অনুযায়ী সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কলেজের সদ্যবিদায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন জানান, আমি অন্য কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি। কিন্তু সভাপতি আমার ক্লিয়ারেন্স কাগজের জন্য ৩ লাখ টাকা দাবি করেছেন। টাকা না দেওয়ায় আমার কাগজপত্রও দিচ্ছে না। এছাড়াও আমার কাছ থেকে ডিগ্রি ফরম ফিলাপসহ কলেজের সব টাকা সভাপতি রসিদবিহীন জোরপূর্বক নিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, জ্যৈষ্ঠতার ক্রমানুসারে থাকা ৫ শিক্ষকের মধ্য থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করার সরকারি বিধান থাকলেও এ কলেজে অবৈধভাবে কনিষ্ঠ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল বলেন, কলেজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে কলেজের গভর্নিংবডি যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। জ্যৈষ্ঠই হোক আর কনিষ্ঠই হোক। গভর্নিং বডি চাইলে পিয়নকেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে পারে।
কলেজের বর্তমান সভাপতি শাহাদত হোসেন বলেন, আমি যেভাবেই হোক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি মনোনীত হয়েছি। এখন কলেজ আমি যেভাবে চালাব সেভাবে চলবে। এখানে সরকারের কোনো নিয়ম চলবে না।
মন্তব্য করুন