ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান সহকারী মাইজুল ইসলাম একই অফিসে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে কর্মরত আছেন। তার ক্ষমতার দাপটে অসহায় বড় কর্তারাও। অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। গাড়ি-বাড়িসহ জমি কিনেছেন নামে-বেনামে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারী বিধি মোতাবেক ৩ বছর পর পর বদলির নিয়ম থাকলেও তার বেলায় সেটা হয়ে ওঠেনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুদকের অভিযানে এ তথ্য উঠে আসে।
জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান সহকারী মাইজুল ইসলাম ২৫ বছর ধরে একই কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে থেকে বর্তমানে প্রধান সহকারী পদে কর্মরত। হাসপাতালের স্টাফ পরিচালনা, তাদের বিল ভাউচার সমন্বয়, বাসাবাড়ি বরাদ্দ, ট্রেনিং, প্রমোশনসহ হাসপাতালের সব বিষয় দেখভাল করেন তিনি। হাসপাতালের পথ্য, স্টেশনারি এবং ওষুধ সরবরাহসহ সকল প্রকার ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ কর্তাও তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, তার মতের বাইরে গেলে নানাভাবে হয়রানি হতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। তার কাছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও যেন অসহায়। তার অনৈতিক কাজে বাধা দেওয়ায় বিগত সময়ে অনেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তিনি এখান থেকে তাড়িয়েছেন। বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর জব্বারের সঙ্গেও প্রথমে বিরোধ হয় তার। পরে অবশ্য তার সঙ্গে সমঝতা করতে হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে। বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে কামিয়েছেন কোটি টাকা।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে সংসদ সদস্যের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দীন আহমেদের ভাগ্নি জামাই তিনি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হাফিজ উদ্দীন এমপি ছিলেন। অভিযোগ আছে, এ সময় তার ছত্রছায়ায় থেকে হাসপাতালে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন মাইজুল। এমপিকে দিয়ে সব কিছু বাগিয়ে নিয়েছেন। তাছাড়া কর্মচারীদের জেলা ও বিভাগীয় নেতাও তিনি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এমপি হাফিজউদ্দীন আহমেদ এরপর আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি ইমদাদুল হক এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রায়ত সাদেক কুরাইশীকে হাত করে নিয়ন্ত্রণে রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
২০২২ সালের উপনির্বাচনে তার মামা শ্বশুর হাফিজউদ্দীন আহমেদ আবারও এমপি নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্য বিভাগে আরও দাপট বাড়ে তার। এ সময়ও নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করেছেন তিনি।
অফিস সহকারী পদে চাকরি করলেও বিগত ২৫ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কয়েক কোটি টাকা লুটে নিয়ে শহরের গ্রীন লাইন আবাসিক এলাকায় বহুতল প্রসাদ নির্মাণ করেছেন। শহরের মুন্সিপাড়ায় কিনেছেন একাধিক প্লট, নামে বেনামে কিনেছেন বিশ বিঘারও অধিক আবাদী জমি। প্রাইভেট গাড়ি তো রয়েছেই। মেয়েকে ডাক্তারি পড়িয়েছেন ঢাকার একটি নামিদামি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে।
অভিযোগের বিষয়ে মাইজুল জানান, বিভিন্ন পদে তিনি একই কর্মস্থলে ২৫ বছর চাকরি করেছেন সত্য। তবে দুর্নীতি করেননি বা অবৈধভাবে আয় করেননি। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না।
এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমি শরিফ মারজী জানান, অনুসন্ধানকালে প্রধান অফিস সহকারী মাইজুল ইসলামের একই কর্মস্থলে ২৫ বছর চাকরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এসেছে সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার বলেন, মাইজুলের অনেক পাওয়ার। এখানে দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে আছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। প্রথমে তার সঙ্গে একটু বিরোধ হয়েছিল। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমার নাম কেউ ভাঙাতেই পারে। তবে আমি তাকে কোনো প্রকার প্রশ্রয় দিইনি। তাছাড়া তার বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগও করেনি।
মন্তব্য করুন