সাভারের আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেলের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে গত দুই মাস ধরে আন্দোলন চলছে। এতে অচল হয়ে পড়েছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। থমকে গেছে জমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এতে দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরেও আশুলিয়ার সিএমবি সড়কে দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন। এ সময় বিক্ষুব্ধ দলিল লেখক ও স্থানীয় বিক্ষোভকারীরা সাব-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেন।
তাদের অভিযোগ, খায়রুল বাশার ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইলে স্বাক্ষর দেন না। এমনকি অধিকাংশ দলিল নিজের বাসায় বসে সম্পাদন করছেন, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক।
আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খায়রুল বাশার পাভেল যোগদানের পর থেকেই ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল সামনে এগোয় না। সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। ঘুষখোর এই কর্মকর্তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, কিন্তু দাবি আদায় না হলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হব।’
আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাবেক সহসভাপতি মোতালেব হোসেন বলেন, সাব-রেজিস্টার সর্বোচ্চ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। দলিলে দলিল লেখকরা মুসাবিদা করার নিয়ম থাকলেও সে অন্যায়ভাবে দাতা কিংবা তার পছন্দ মতো যে কাউকে দিয়ে নামে বেনামে করাচ্ছে। ঘুষ ছাড়া সে কিছুই বোঝে না। সে বেশির ভাগ দলিল বাসায় ডেকে নিয়ে করছে। আমরা তার প্রতিহিংসার শিকার। সে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে গোটা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটা কলঙ্কিত করেছে। আমরা তার অপসারণ চাই।
রুমা আক্তার নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তার পাঠানো অর্থে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে আমি একটু জমি কিনে রেজিস্ট্রেশন করতে আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এলে সোসাইটির জমি হওয়ায় একটি অনুমতিপত্র দাবি করে। অথচ পাভেল তিনি আসার আগে কদিন আগেও কোনো অনুমতিপত্র লাগত না। আমার এক আত্মীয়ও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া একটি জমি রেজিস্ট্রেশন করেছে। তার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি জমিটি রেজিস্ট্রেশন করতে একাধিকবার যাওয়ার পরও সাব-রেজিস্ট্রার পাভেল আমাকে বলেন, ১৫ লাখ টাকা দিলে এই জমি কাগজ ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন করে দেবেন। আমার প্রশ্ন, টাকা দিলে যদি কাগজ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন হয়, তাহলে টাকা না দিলে কেন হবে না?
নিরালা কো-অপারেটিভ হাউসিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সমবায় অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আশুলিয়া থানার বেলমা মৌজায় ৭০ শতাংশ জমি ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকায় একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। দলিলে যার মূল্য মাত্র আনুমানিক দেড় কোটি টাকা ধরা হয়। ফলে সরকার রাজস্বের বড় একটা অংশ হারায়। দলিল নম্বর ৯০১২/২৫। দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রারের বাসায় বসে সম্পাদন করা হয় এবং এক কোটি টাকা ঘোষের বিনিময়ে এ কার্যটি সম্পন্ন করেন সাব-রেজিস্ট্রার।
অন্যদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেল বলেন, ‘এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। আমি আইনের বাইরে কোনো কাজ করি না। কারও চাপে পড়ে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’
তবে চলমান অচলাবস্থায় জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা, স্থানীয় বাসিন্দা এবং সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত সমাধান না হলে এই অচলাবস্থা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
মন্তব্য করুন