চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে বাবার ছুরিকাঘাতে ছেলে খুন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নর ৮নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মায়ানী ঘড়ি মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত তরুণ মো. সাহেদ (২২) ওই ইউনিয়নের শেখ আকনের বাড়ি মো. নুরুজ্জামান ও কামরুজ্জাহান বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সাহেদ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন মো. সাহেদ। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রামের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে সংসারে সহযোগিতাও করতেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহেদের বাবা নুরুজ্জামান ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করেন চাকরির সূত্রে। তার স্ত্রী কামরুজ্জাহান দুই মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে থাকতেন। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। গত ১১ আগস্ট ছোট মেয়ের বিয়ে হয়। সে বিয়ের অনুষ্ঠানে বন্ধুর স্ত্রী পরিচয়ে নুরুজ্জামান সিলেটের এক নারীকে মিরসরাইয়ের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে তখনো অশান্তি হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ওই নারীকে বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন তিনি।
নিহত মো. শাহেদের খালা নুর জাহান বেগম বলেন, ‘মো. নুরুজ্জামান মঙ্গলবার দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার বিকেলে এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ওই বাড়িতে যাই। ওইখানে যাওয়ার পরপরই নুরুজ্জামান আমার বোন কামরুজ্জাহানের মাথার চুলের মুঠি ধরে ফেলে। তখন খুন হওয়া ছেলে সাহেদ মাকে বাঁচাতে গেলে তার বুকে ছুরি মেরে দেয় বাবা মো. নুরুজ্জামান। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।’
সাহেদের মা কামরুজ্জাহান বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মো. নুরুজ্জামান সৌদি আরব থাকা অবস্থায় সিলেট জেলার এক নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক গড়ে তুলে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার ওই নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। খবরটি শুনে বুধবার সন্ধ্যায় শহর থেকে বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বামী ছেলের বুকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলেছে।’
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (মস্তাননগর) হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আর্যরাজ দত্ত কালবেলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হতে পারে৷’
এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘মায়ানী এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে বাবা-ছেলের কথা কাটাকাটি হয়৷ ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবার সঙ্গে তর্কে জড়ালে বাবা ধারালো ছুরি দিয়ে ছেলেকে আঘাত করে৷ পরিবারের সদস্যরা বেসরকারি হাসপাতালের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন৷
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার রাতে তার মা কামরুজ্জাহান বাদী হয়ে শাহেদের বাবা নুরুজ্জাহান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
মন্তব্য করুন