কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া-মাইজখার (এএমএফ) উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত একতলা ভবনটি হস্তান্তরের আগেই বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ভবনটির কোথাও দেয়ালে ফাটল, কোথাও আস্তরণ উঠে গেছে, ছাদে পানি জমে দেখা দিয়েছে ড্যামেজ, কাঠের দরজায় বাসা বেঁধেছে ঘুণপোকা। এছাড়া নিম্নমানের পাইপ ফিটিংস ও ইলেকট্রিক মালামাল লাগানোর ফলে বেড়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এই ভবনের নির্মাণকাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নম্বরবিহীন নিম্নমানের ইট ব্যবহারে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনের গাঁথুনী। দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা ইতোমধ্যেই ধসে পড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন স্থানে। বৃষ্টি হলেই ছাদের ওপর পানি জমে থাকে দীর্ঘসময়, যা ভবিষ্যতে ছাদে চিড় ধরা ডেমেজের আশঙ্কা তৈরি করছে। এমনকি দরজার কাঠেও ইতোমধ্যে ধরেছে ঘুণপোকা। জানালায় নিম্নমানের থাই গ্লাস ব্যবহারেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় অভিভাবকরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকের আশঙ্কা, ভবনটি দ্রুত সংস্কার বা পুনর্মূল্যায়নের আওতায় না আনলে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাবে। তারা আরও জানায়, বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শিডিউল অনুযায়ী না হওয়া, নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং যথাযথ তদারকির অভাবে এ সমস্ত অনিয়ম সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এদিকে, বিদ্যালয়টির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তারের যৌথ স্বাক্ষরে গত ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তার বলেন, ‘আমরা বারবার ঠিকাদারকে অনুরোধ করেছি যেন শিডিউল অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু আমাদের অনুরোধের কোনো গুরুত্ব দেয়নি। ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’
ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর কালবেলাকে বলেন, ‘ভবনের নির্মাণ কাজের নানা অনিয়ম ও ত্রুটির বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সরকার যে উন্নয়ন করছে, মাঠপর্যায়ে যেন তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।’
ঠিকাদার কবির উদ্দিন মিন্টু কালবেলাকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির কাজ শুরু করার পর থেকে স্থানীয় কিছু লোক চরমভাবে ডিসটার্ব করেছে। তারপরও আমি শতভাগ কাজ করার চেষ্টা করেছি। গত ৬ মাস আগেই কাজ বুজিয়ে দিয়েছি। তারপর জেলা প্রকৌশলী আমাকে ডেকে কিছু দ্রুত সংস্কার করার জন্য বলেছেন, আমি বলেছি সেগুলোও করে দিব।’
এদিকে চান্দিনা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী লক্ষণ সূত্রধর বলেন, ‘ঠিকাদার এখনো আমাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। যদি ঠিকাদার বলে থাকেন, তাহলে মিথ্যা বলছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরাও বিষয়টি তদারকি করছি এবং ঠিকাদারকে দ্রুত সংস্কারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছি।’
মন্তব্য করুন