‘প্রতিটি বড় মণ্ডপে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন দেখে সত্যিই স্বস্তি লাগছে। আমরা নিরাপদ বোধ করছি। তাই পুরো উৎসবটা ভয়মুক্ত ও আনন্দমুখরভাবে উপভোগ করতে পারছি। ভোর থেকেই দেবী দুর্গার আগমনকে ঘিরে ভক্তদের মধ্যে যে উত্তেজনা, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি সেই উত্তেজনাকে আরও নিরাপদ ও আনন্দময় করে তুলেছে।
নগরীর জেএমসেন হলে মহালয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কিশোর চক্রবর্তী এমনটাই বলছিলেন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপ, মন্দির ও মহাশ্মশানগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ করা গেছে। জেএমসেন হল, কুসুমকুমারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাজারি লেইন, আগ্রাবাদের গোসাইলডাঙা, পাথরঘাটাসহ নগরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, গীতাপাঠ, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি ভক্তদের প্রফুল্ল করেছে। হিন্দি গান বা ডিজে বাদ দিয়ে, সনাতনী রীতি মেনে পূজা ও আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে জেএমসেন হলে রোববার দিনব্যাপী মহালয়া ও দেবীপক্ষের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়েছে। সকাল ৯টায় মহালয়া পূজা, বিকেল ৩টায় শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ, বিকেল ৪টায় জাতীয় ও পরিষদের পতাকা উত্তোলন ও মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন হয়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে নৃত্যনাট্য-গানসহ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাত ৮টায় ‘মহামায়ার আগমনী’ পরিবেশন করেছে ডমরু ব্যান্ড।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ বলেন, ‘সেনাবাহিনী ও পুলিশের মোতায়েন ভক্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ভক্তরা এখন নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন করতে পারছে। বিশেষ করে বড় মণ্ডপে সেনা-পুলিশের দৃঢ় উপস্থিতি সব ধরনের উদ্বেগ দূর করেছে।’
এদিকে নগরীর গোলপাহাড় মহাশ্মশান ও কালীমন্দির পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগেও মহালয়া পালিত হয়েছে বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে। ব্রাহ্ম মুহূর্তে দেবী দুর্গার আগমনের আহ্বান জানানো হয়। সকাল ৮টায় সমবেত গীতাপাঠ, ৯টায় মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডীপাঠ, ১০টায় বংশীধ্বনি, ১১টায় শিশু শিল্পীদের অংশগ্রহণে উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশন করা হয়। দুপুর ১২টায় মায়ের পূজা, ১টায় প্রসাদ বিতরণ, দেড়টায় হয় নৃত্যানুষ্ঠান। বিকেল ৩টায় অতিথি শিল্পীদের পরিবেশন, ৬টায় ‘গৌরী এলো, দেখবে চলো’, ৭টায় নৃত্যনাট্য ‘সতীর দেহত্যাগ’ এবং রাত ৮টায় মহালয়া অমাবস্যা পূজা ও মাতৃসংগীত অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, দুর্গাপূজার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উদযাপন নিশ্চিত করতে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে স্থায়ী আনসার বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি টহল রয়েছে। নিরাপত্তা নজরদারি জোরদার করতে আইপি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি, উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ডকে বিশেষ সতর্কতামূলক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ বলেন, জেলায় প্রতিমা পূজা হচ্ছে ১ হাজার ৬১৪টি, আর ঘটপূজা ৫৭৯টি— মোট ২ হাজার ১৯৩টি। চৌধুরীহাট, মোফাফরাবাদ, চন্দনাইশ, বোয়ালখালীসহ বিভিন্ন স্থানে বড় পূজা হচ্ছে। নির্বিঘ্নে পূজা আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির জানান, প্রতিটি থানার ওসি ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। প্রতিমা নির্মাণ ও বিসর্জন এলাকায় সাদা পোশাকে সেনা-পুলিশ বাহিনী মোতায়েন, অতিরিক্ত গাড়ি ও জনবল, সার্বক্ষণিক মনিটরিং, কুইক রেসপন্স টিম এবং সিসিটিভি স্থাপনসহ গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
মন্তব্য করুন