অশুভ শক্তির বিনাশ আর জগতের শান্তি প্রতিষ্ঠার বিশ্বাস নিয়ে এবার নারায়ণগঞ্জে ২২৪টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলেছেন, এরই মধ্যে মণ্ডপের প্রস্তুতি প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
দিনরাত কাজ করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। এবার পূজার আনন্দ-উৎসবে ভাসবে নারায়ণগঞ্জ। মা দুর্গাকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) উৎসবমুখর পরিবেশে জেলার হিন্দু সম্প্রদায় পালন করেছে শুভ মহালয়া। ভক্তদের উলুধ্বনি, চণ্ডীপাঠ, বিশেষ পূজা-অর্চনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহালয়া পালন করা হয়।
মা দুর্গাদেবীকে মর্ত্যে আহ্বান করে ভোরে শহরে আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, শ্রীশ্রী বলদেব জিউর আখড়া ও শিবমন্দিরে দেবী-বন্দনা এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেবীপক্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনার এ তিথিতে দেবী দুর্গা মর্ত্যে আগমন করেন।
এর মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু ও পিতৃপক্ষের শেষ হয়। মহালয়ার অনুষ্ঠানে শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এসে মণ্ডপে ভিড় জমান। দেবী দুর্গার অসুর বধ নাচ ও গানের মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনী দুর্গার মহাশক্তির রূপ তুলে ধরা হয়। এসময় ভক্তরা দুর্গতিনাশীনি দুর্গা দেবীর কাছে সুখ-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন।
শ্রীশ্রী বলদেব জিউ ও শিবমন্দিরে পুরোহিত সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, এবার দেবী দুর্গার আগমন হবে গজে (হাতি) এবং প্রস্থান হবে দোলায়। গজে দেবীর আগমন সমৃদ্ধি, শান্তি ও শস্য-শ্যামলা বোঝায়, যা শুভ ফল নির্দেশ করে।
অন্যদিকে, দোলায় দেবীর প্রস্থান মহামারি, দুর্যোগ বা মড়কের আশঙ্কা নির্দেশ করে, যা অশুভ। এবার পূজায় দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা থাকবে তিনি যেন দেশ ও পৃথিবীর সকল মানুষের জীবনে শান্তি বয়ে আনেন।
আমলাপাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটি সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা বলেন, শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ করে মায়ের আগমন হয়েছে। আমাদের প্রার্থনা, দেশের মঙ্গল কামনা ও সকল অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটুক।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, এ বছর জেলায় মোট ২২৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৭টি ও রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সংকর দে বলেন, পূজা উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তারা সর্বাত্মক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ একটি অসাম্প্রদায়িক উর্বর ভূমি। সব কিছু মিলিয়ে আমরা একটা সুন্দর পরিবেশে পূজা উদযাপন করার প্রত্যাশা করছি।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজায় নিরাপত্তার কাজে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী মাঠে থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করি। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই।
মন্তব্য করুন