শুভ মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে দেবী আবাহনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শুভ সূচনা হয়েছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহে দুর্গাবাড়ি নাটমন্দিরে আর্যধর্ম জ্ঞানপ্রদায়িনী সভা (ধর্মসভা) দুর্গাবাড়ি মন্দির আয়োজিত দেবী আবাহনে শঙ্খধ্বনি, শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠ, সমবেত সংগীত, মাতৃবন্দনা ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে দেবীকে মর্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
রোববার ভোর ৬টা ২ মিনিটে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে দুর্গাবাড়ি মন্দির পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনাপর্ব দেবীকে আবাহন করা হয়।
এ সময় দুর্গাবাড়ি আর্যধর্ম জ্ঞানপ্রদায়িনী সভার সভাপতি প্রফেসর বিমল কান্তি দে, দুর্গাবাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার দাস চন্দন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি সরকারসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত শত ভক্তকুল ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮৮টিসহ ময়মনসিংহ জেলায় ৭৮১টি পূজামণ্ডমে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রোববার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীর মর্ত্যে আগমনের আনুষ্ঠানিক ক্ষণগণনা শুরু হলো।
সরেজমিনে বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, জেলা ও নগরীর বিভিন্ন মন্দির এবং প্রতিমা তৈরির কারখানায় প্রতিমা তৈরিসহ মন্দির সজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে। বেশিরভাগ স্থানে প্রতিমায় রং ও সাজসজ্জার কাজও শেষ।
দুর্গাবাড়ি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার ইতিহাস শত বছরের অধিক। এ ছাড়া নগরীর নাগবাড়িতে পূজার সুদীর্ঘ কালের ইতিহাস রয়েছে। পূজা ঘিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মিলনমেলাও হয়ে থাকে। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে ময়মনসিংহে আত্মীয় বাড়িতে এসে পূজা উদযাপনে যুক্ত হন। শুধু নারীদের আয়োজনেও ময়মনসিংহে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবার নগরীর শিববাড়িসহ ৩টি স্থানে নারীদের আয়োজনে এমন পূজা হবে।
নগরীর শ্রীশ্রী রঘুনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের শিল্পী জয়ন্ত ঘোষ বলেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা তৈরিতে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ বেশি হয়েছে। প্রতিবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় একটু কম।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ময়মনসিংহ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা বলেন, দুর্গাপূজা আমাদের কাছে আনন্দের উৎসব, আবার সম্প্রীতির প্রতীকও। সবখানেই এখন উৎসবের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হয়ে মহাদশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় উৎসবের।
পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। এবারের পূজার নিরাপত্তায় এক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
মন্তব্য করুন