রংপুর নগরীর হারাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় ফেল করা প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতির বিরুদ্ধে।
স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) মহানগর কমিটির আহ্বায়ক। গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন ইমতি। তিনি ঢাকার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিদ্যালয়ে আসেন ইমতিয়াজ আহমেদ। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ফেল করা শিক্ষার্থীদের বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এ সময় উপস্থিত কোনো শিক্ষক তাকে বাধা দেননি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ফেল করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলে যান ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যারা ফেল করেছে তাদের বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। এ সময় কোনো শিক্ষক বাধা দেননি।
এ ঘটনার দুদিন পর অভিভাবক ও এলাকাবাসী স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী পেটানোর ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের কাছে জবাব ও বিচার চান। পরে মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থীর বড় ভাই নগরীর পরশুরাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ঘটনার এতদিন পার হলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তারই পক্ষে কথা বলেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার দাবি, ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, স্কুলে শিক্ষার্থীকে শারীরিক নিযাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাকে এ বিষয়টি জানানো হয়নি।
মারধরের শিকার কয়েকজন শিক্ষার্থী কালবেলাকে জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরের দিকে ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্কুলে আসেন তিনি। এ সময় বাঁশের সরু লাঠি হাতে অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিকক্ষে যান। শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের পরীক্ষার রেজাল্ট জানতে চান। এ সময় যারা ফেল করেছেন তাদের পেটাতে শুরু করেন। সেখানে শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও সে সময় তারা কিছু বলেনি।
ভুক্তভোগী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাওন কবির বলেন, পেছন দিক থেকে ক্লাসে ঢুকে এক এক করে জানতে চাইছে রেজাল্ট কি? এ সময় যে বলছে ফেল তাকেই মারছে। আমি দুই সাবজেক্টে ফেল বলছি, আমাকে ৩টি আঘাত করেছেন। অন্যদের আরও বেশি মারছে।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহানুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ক্লাসে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞেস করছে কয় সাবব্জেক্ট ফেল করছো? আমি দুটা বলায় পিটিয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী আইরিন আক্তার বলেন, আমাকে দুই হাতে মারছে। অন্য বান্ধবীদেরকেও মেরেছে। শুধুমাত্র দুয়েকজন ছাড়া সবাই মাইর খাইছে। যারা সেদিন ক্লাসে অনুপস্থিত তাদের নাম লিখে নিয়ে গেছে।
আইরিন আক্তারের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, সভাপতি কেন বাচ্চাদের মারবে। আমার ভাতিজিকে মারছে। হাত ফুলে গেছে তার। পরে ওষুধ নিয়ে খাওয়াইছি।
রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার পর আমরা অভিভাবকেরা স্কুলে গেলে ইমতি প্রথমে ক্ষমা চায়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে ফোন দিয়ে পুলিশের গাড়ি নিয়ে আসে। এতে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ইমতি লোক মারফত আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এত বড় একটা অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ধামাচাপা দিয়েছেন।
স্কুলের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি বলেন, একটু রাগারাগি করছি, শাসন করছি এ আর কি। কিন্তু এটা নিয়ে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো কমপ্লেইন নেই। আমি নিজেও এ এলাকার বড় ভাই। একটু শাসন করছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে এটা মিউচুয়াল হইছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারধরের কথা অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, উনি এসে শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়াশোনা ও রেজাল্ট করতে উৎসাহ দেন। পরে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ওটা তো পারেন না। বাচ্চা, অভিভাবক নিয়ে মীমাংসা করে দিছি। বাচ্চারাও মেনে নিয়েছে।
রংপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এটি নিষিদ্ধ। হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে বিষয়টি জানাননি। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন