গরু ছাড়াই তিন যুগ ধরে বুক দিয়ে তেলের ঘানি টেনে জীবনযাপন করছেন ষাটোর্ধ্ব মোস্তাকিন দম্পতি। নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের বাসিন্দা তারা। এই প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর দৃষ্টিগোচর হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এরপর ওই বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৮ অক্টোবর) ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, কালবেলা অনলাইনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট পত্রিকায় এই দম্পতির সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় এই হতদরিদ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-কে।
জানা গেছে, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল গফুর সরকার মোস্তাকিন-ছকিনা দম্পতির সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে ২ অটোরিকশা ও তাদের প্রতিবন্ধী মেজো ছেলে শাহাজাহানের জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেবেন।
এদিকে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, মোস্তাকিন-ছকিনা দম্পতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপস্থিত থাকবেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও 'আমরা বিএনপি পরিবার'-এর প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের নেতৃত্বে সংগঠনটির উপদেষ্টাবৃন্দ সদস্য সচিব ও সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি বিশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তারা।
দারিদ্র্য এবং অবহেলা জর্জরিত বৃদ্ধ মোস্তাকিন আলী কালবেলাকে বলেন, আমার মাথাগোজার ঠাঁইয়ের জায়গাটুকু ছাড়া আর কোনো ফসলের জমি নেই। চার বছর আগে আমার এই কঠিন জীবনযাপনের কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেলে নীলফামারীর সদরের এক দানবীর ব্যক্তি তার খামার থেকে আমাকে একটি গরু দান করেছিলেন। দুই বছর লালনপালন করার পর একটি বাছুরও জন্মেছিল। আনন্দে আমার বুকটা ভরে উঠেছিল কিন্তু কপালে আমার সুখ সয় নাই। গাভীর দুধের বাটনে পচন ধরেছিল; বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় কসাইয়ের কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি।
স্ত্রী ছকিনা কালবেলাকে বলেন, আমার এই বৃদ্ধ স্বামী জীবন বাঁচার তাগিদে প্রতিদিন সকালে এক অবর্ণনীয় ঘূর্ণায়মান জীবনযুদ্ধে নেমে হেঁটে গ্রামে গ্রামে সরিষা সংগ্রহের কাজে বের হয়ে যান। সরিষা সংগ্রহ শেষান্তে বাড়িতে ফিরে বিরামহীনভাবে তেলের ঘানি টানার কাজ করেন বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এতে ৫ কেজি সরিষার দানা পিষে সোয়া লিটার তেল ও ৩ কেজির মতো খৈল বের করেন। এতে তার প্রতিদিন আয় আসে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এতে খাওয়া তো দূরের কথা শরীরের ঘাম শুকাতে না শুকাতে তেল ও খৈল বিক্রির জন্য ছুটে যেতে হয় হাটবাজারে।
মন্তব্য করুন