কফি—এনার্জি বাড়ানোর জনপ্রিয় এক পানীয়। সকালে ঘুম ভাঙাতে, অফিসে মনোযোগ ধরে রাখতে বা আড্ডায় প্রাণ ফেরাতে এক কাপ কফি যেন অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাস। তবে সবার জন্য এই প্রিয় পানীয়টি সমান নিরাপদ নয়। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, বা ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য কফি খাওয়া নিরাপদ নয়। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এটি বিপদজনক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যেমন অনিদ্রা, উদ্বেগ, হজমে সমস্যা, হার্টরেট বৃদ্ধি এমনকি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া পর্যন্ত। তাই কফি যতই উপভোগ্য হোক না কেন, কার জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ তা জানা জরুরি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন ৮ ধরনের মানুষের কফি পান বিপদজনক হতে পারে—
১️. ক্যাফেইনে সংবেদনশীল ব্যক্তিরা
যাদের ক্যাফেইনের সহনশক্তি কম, তারা সামান্য কফি খেলেও হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, উদ্বেগ, ঘাম বা হজমের সমস্যা অনুভব করতে পারেন। এটি জিনগত কারণেও হতে পারে বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে।
পরামর্শ : এসব লক্ষণ দেখা দিলে কফি কমিয়ে দিন বা সম্পূর্ণ বাদ দিন।
২. গর্ভবতী নারী
গর্ভাবস্থায় বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে শিশুর ওজন কমে যাওয়া, প্রি-টার্ম বেবি বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
পরামর্শ : দিনে সর্বোচ্চ ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন না খাওয়াই নিরাপদ। হারবাল চা বা ডিক্যাফ কফি বেছে নিতে পারেন।
৩. হৃদরোগী ব্যক্তি
ক্যাফেইন হার্টরেট ও রক্তচাপ বাড়ায়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হার্টবিট) বা হৃদরোগ আছে, তাদের জন্য কফি ঝুঁকিপূর্ণ।
পরামর্শ : নিয়মিত কফি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের রোগী
কফি স্বভাবতই অ্যাসিডিক, যা পাকস্থলির এসিড নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডিটি, হার্টবার্ন বা জিইআরডি (GERD) বেড়ে যেতে পারে।
পরামর্শ : খালি পেটে কফি খাবেন না। প্রয়োজনে কম-অ্যাসিড বা কোল্ড ব্রিউ কফি বেছে নিতে পারেন।
৫. শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা
শরীরে ওজন ও বিপাক ক্রিয়া (metabolism) কম থাকায় ক্যাফেইন শিশুদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘুমের সমস্যা, মনোযোগহীনতা, উদ্বেগ ও মাথাব্যথা হতে পারে।
পরামর্শ : শিশুদের একেবারেই কফি না দেওয়া এবং কিশোরদের দৈনিক ১০০ মিলিগ্রামের বেশি না খাওয়াই শ্রেয়।
৬️. উদ্বেগ বা মানসিক চাপজনিত রোগী
কফির ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা উদ্বেগ, নার্ভাসনেস বা প্যানিক অ্যাটাক বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরামর্শ : যাদের জেনারেলাইজড অ্যানজাইটি বা প্যানিক ডিসঅর্ডার আছে, তারা কফির পরিবর্তে হারবাল টি বেছে নিতে পারেন।
৭️. ঘুমের সমস্যা বা ইনসমনিয়ায় ভোগা ব্যক্তি
ক্যাফেইন ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এমনকি সকালে কফি খেলেও অনেকের রাতের ঘুম নষ্ট হয়।
পরামর্শ : বিকেল ৪টার পর কফি না খাওয়া এবং ঘুমের আগে অন্তত ৬ ঘণ্টা বিরতি রাখা ভালো।
৮️.অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি
অতিরিক্ত কফি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ কমিয়ে দেয়, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। বিশেষত মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
পরামর্শ : দিনে ৩ কাপের বেশি কফি না খাওয়া ও পর্যাপ্ত দুধ বা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
শেষ কথা
কফি মন ভালো করে, ক্লান্তি দূর করে—এ কথা সত্য। কিন্তু পরিমিতি না মানলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে। যদি কফি খাওয়ার পর অনিদ্রা, অস্থিরতা বা হজমের সমস্যা অনুভব করেন, তবে বিকল্প হিসেবে হারবাল চা, গ্রিন টি বা ক্যাফেইন-ফ্রি ড্রিঙ্কস বেছে নিতে পারেন।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন