বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্তে রেকর্ড ভাঙার একদিন পরেই এবার মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বরিশাল বিভাগে মৃত্যুবরণ করেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭ জন রোগী।
যাদের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। এ নিয়ে এই হাসপাতালটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১ জনে। আর গোটা বিভাগে মৃত্যু হলো ৬৫ জনের।
তাছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের হাসপাতালগুলোতে নতুন করে আরও ৪১৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ হাজার ১৬০ জন রোগী। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭৪ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ডেঙ্গু রোগীর দৈনিক পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর হারও বাড়ছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর যে রেকর্ড হয়েছে সেটা খুবই চিন্তার বিষয়। ইতোপূর্বে বরিশাল বিভাগে একদিনে এতো সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন- নগরীর কাউনিয়া এলাকার কাঞ্চন আলী (৬০), সাগরদী এলাকার বাষন্তী রাণী (৫৫), বরগুনার আমতলী উপজেলার নূরুল আমিন (৫৫), বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আনোয়ারা বেগম (৭০), বানারীপাড়া উপজেলার রুশিয়া বেগম (৫৭) ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার মনোয়ারা বেগম (৫৫)।
এছাড়া পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন একই উপজেলার বাসিন্দা বারেক হাওলাদার (৮০)।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪১৯ রোগী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২৬ জন বরিশাল জেলায়, পটুয়াখালীতে ১০৬ জন, পিরোজপুরে ৬৫ জন, ভোলায় ৪৬ জন, বরগুনা ৬৭ জন ও ঝালকাঠিতে ৯ জন।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে মোট ১৮ হাজার ১৮৫ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৯৬০ জন।
জানা গেছে, চলতি বছরে দৈনিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল গত ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত। এছাড়া ইতোপূর্বে ডেঙ্গুতে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ ৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে। এরপর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, হঠাৎ করে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার কারণ সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে বর্তমানে আক্রান্তের হার যেমন বাড়ছে তেমনি মৃত্যুর হারও বেশি। এই মুহুর্তে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমরা দুটি বিষয় দেখছি। একটি হলো- আক্রান্ত রোগীদের খুব খারাপ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। তখন আমাদের আর কিছু করার থাকে না। ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। অপর কারণ যারা বয়স্ক রোগী এবং আগে থেকে ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি আগে থেকেই বলছি, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বাড়িতে বসে গ্রাম্য চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ না করে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আমরা চিকিৎসকদের সজাগ থাকতে বলেছি। যাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে যাতে তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতি পারি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতির কমতি নেই বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।
মন্তব্য করুন