

পাবনার ঈশ্বরদীতে মা কুকুরের অগোচরে ৮টি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত নিশি রহমানকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী পৌর সদরে রহিমপুর গার্লস স্কুলের পাশে একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত নিশি রহমান ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী।
এর আগে, এদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর উপজেলা পরিষদ চত্বরের আবাসিক এলাকায় গেজেটেড ভবনে বসবাসরত নিশি বেগম কর্তৃক অমানবিকভাবে ৮টি কুকুরছানা পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গির জানান, গেজেটেড ভবনে মা কুকুর সম্প্রতি ৮টি কুকুরছানা প্রসব করে। গত রোববার সন্ধ্যার পর ছানাগুলোকে দেখতে না পেয়ে মা কুকুরটি হন্যে হয়ে এদিক সেদিক খোঁজ করার পাশাপাশি বিকটভাবে কাঁদতে থাকে। সারারাতই মা কুকুরটিকে অফিসার্স ক্লাব এবং আবাসিক এলাকার বিভিন্ন বাসার দরজায় দরজায় ঘুরতে দেখা গেছে। এসময় খাবার দিলেও সে কোন কিছুতে মুখ দেয়নি। আমরা তখনও জানি না, ছানাগুলো নেই। পরে ছানাগুলো নেই জানার পর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান মেলেনি।
তিনি আরও জানান, সোমবার সকালে ইউএনও স্যারের আবাসিক ভবনের সামনে দিয়ে হাসানুর রহমান নয়ন স্যার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে কুকুর ছানার বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসময় তার ছোট ছেলে বলে ওঠে ‘আম্মু কুকুরের বাচ্চাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ একথা শুনে নয়ন স্যার দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পরে পুকুরে গিয়ে দেখি মুখ বাঁধা বস্তা ভাসছে। তুলে এনে বস্তার মুখ খুলে দেখা যায় ছানাগুলো মরে আছে।
এদিকে, এ ঘটনার ছবিসহ সংবাদ দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক পোস্টেই কুকুর হত্যাকারীর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন অনেকেই।
এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (এডিসি) সুবীর কুমার দাস ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘অবশেষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং আসামি গ্রেপ্তারও হয়েছে। অশেষ কৃতজ্ঞতা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা স্যার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমার প্রিয় ব্যাচমেট প্রণব দাদা, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা আপু, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ যারা এই যুদ্ধে সবসময় আমার পাশে ছিলেন, ঈশ্বরদী অফিসার ইনচার্জ, মিডিয়ার সহকর্মীবৃন্দ এবং সারা দেশবাসীর প্রতি এবং সবশেষে যার কথা না বললেই নয় রাকিবুল আমিল ভাই ও তার টিম। আর যেন কোনো অবলা প্রাণীর ক্ষতি না হয়। এই পৃথিবী আমাদের সবার।’
এদিকে অভিযুক্ত নিশি রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঈশ্বরদীবাসী এই জঘন্যতম ঘটনার কঠিন বিচার দাবি করে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার কালবেলাকে বলেন, আসামি নিশি রহমানকে গ্রেপ্তার করেছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন