

মুক্তি পেয়েও ঘরে ফিরতে পারছে না সাত বছরের ছোট্ট শিশুটি। মাকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে আর বাবা জীবিকার তাগিদে রয়েছেন গভীর সাগরে মাছ ধরার নৌকায়। পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ না থাকায় আদালতের আদেশে শিশুটির অস্থায়ী আশ্রয় হচ্ছে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে। যে বয়সে তার থাকার কথা পরিবারের কোলে বা খেলাধুলার মাঠে, সেই বয়সেই তাকে পাড়ি দিতে হচ্ছে এক অদ্ভুত ও কঠিন অভিজ্ঞতা।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলামের নির্দেশে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আদালত আদেশে বলেন, মা কারাগারে, বাবা সাগরে, ফলে শিশুটিকে আপাতত প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হবে। বাবা ফিরে এলেই তাকে জিম্মায় নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ বলেন, গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে শিশুটিকে মুক্ত করে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। রাতে পৌঁছালে তাকে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটির দায় নির্ধারণে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষে বদলি করা হয়েছে দুই কর্মকর্তাকে। তারা হলেন– চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) মনির হোসেন সরকার এবং নারী ও শিশু আদালতের জিআরও মো. শহীদ। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশিদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিখোঁজ হয় রামিম নামের চার বছরের এক শিশু। বড় ছেলের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন তার মা আনোয়ারা বেগম। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পরও শিশুটির কোনো সন্ধান মিলেনি। অবশেষে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা করেন তিনি।
আর তখনই শুরু হয় বিতর্ক। বাদী অভিযোগ করেন, রামিমকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে খেলার কথা বলে নিয়ে গেছে সাত বছরের এক শিশু ও তার মা। মামলা হওয়ার পরই পুলিশ সাত বছরের শিশুটিকে ও তার মাকে গ্রেপ্তার দেখায়।
এদিকে মামলার বাদীর চার বছর বয়সী সন্তান রামিমের কোনো খোঁজ এখনো মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে এ নিয়ে তদন্ত চলছে, পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু আইনে স্পষ্ট বলা আছে, ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে না। তবুও পাঁচলাইশ থানার পুলিশ শিশুটিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় এবং আদালতের এক অন্তর্বর্তী আদেশে তাকে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, অবকাশকালীন সময়ে মামলাটি দায়রা জজ আদালতে শুনানি হয়। শিশুটিকে আদালতে আনা হলেও এজলাসে তোলা হয়নি। পরদিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বিচারক আদেশ দেন শিশুকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বাবার জিম্মায় দিতে হবে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান স্বীকার করে বলেন, ৯ বছরের নিচে শিশুর অপরাধ আইনসম্মত অপরাধ নয়। ভুলবশত মামলা নেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, এ ঘটনা শিশু আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। জবাবদিহি না থাকলে এ ধরনের ভুল ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
মন্তব্য করুন