মুন্সীগঞ্জে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বিক্রি করতে গত শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। এরপর বাজারগুলোতে অল্প পরিসরে আলু পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কাঁচাবাজার ছিল আলুশূন্য। এমন পরিস্থিতিতে হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু বাজারজাত করার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন জেলা প্রশাসক।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ শহরের কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি দোকানে অন্যান্য সবজি থাকলেও আলু নেই। সবজি বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই আলু বিক্রি করছেন না- এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। যে আলুগুলো বস্তাবন্দি রেখেছেন সেগুলোও বিক্রি করছেন না তারা।
মোনায়েম উদ্দিন মনসুর নামের এক ক্রেতা বলেন, শনিবারের পর থেকে আলু কমতে শুরু করেছে। তখনো ৪৬ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে। যখন প্রশাসনের লোকজন বাজার পর্যবেক্ষণ করতে আসে তখন বিক্রেতারা ৩৬ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করেছেন। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পর বিক্রেতারা আর আলু বিক্রি করছেন না।
শাহপরান নামের এক ক্রেতা আলু কিনতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, শহরের কোনো কাঁচাবাজারে আলু বিক্রি করা হচ্ছে না। ৫০ টাকা কেজি দরেও আলু মিলছে না। এতে ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন।
গত বছর এ সময়ে আলুর দাম ১৬ টাকা থাকলে এ বছর আলুর এমন অস্বাভাবিক মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ দিনমজুর থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া মানুষ। এমন এক দিনমজুর অলিউল্লাহ বলেন, আমরা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। আলুর দাম আর চালের দাম এখন সমান। দিন দিন যদি আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের উপায় থাকবে না।
জেলাতে ১০ লাখ টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। ৬৩টি হিমাগারে এখনো মজুদ রয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন আলু। এই আলুগুলো ঠিকমতো সরবরাহ করা হলে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর এমন কৃত্রিম সংকট হতো না।
আয়নাল হক ও হাবিবুর নামের দুই সবজি বিক্রেতা বলেন, আগে যেই আলু কিনেছি এগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এখন স্টোরেজ থেকে কোনো বেপারী খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বিক্রি করছে না। তারা হিমাগারে মজুদ করে রেখেছে।
আলুর ব্যাবসায়ীরা বলেন, সরকারের বেধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি করলে কেজিতে ৪-৬ টাকা লোকসান গুণতে হয়। প্রয়োজন হয় হিমাগারে আলু পচে নষ্ট হবে। তবুও লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে ক্রেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বলেছেন, আলুর রাজধানী মুন্সীগঞ্জ হলেও অন্যান্য জেলার মতো এখানেও বেশি দামে আলু কেনা-বেচা হচ্ছে। পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে না। বাজারের কোনো সবজি দোকানে নেই কোনো আলু। ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আসায় হিমাগারে আলুম মজুদ রেখে এখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।
এদিকে আলুর বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় ও হিমাগার মালিকদের সহযোগিতায় জেলার ১৪টি হিমাগার থেকে প্রায় ৬০ হাজার বস্তা আলু সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ৬টি ট্রাক দিকে ছয় উপজেলায় ৩৬ টাকা কেজি দরে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে আলু বিক্রি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কাঁচাবাজারে আলু না পাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে হিমাগার থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
মন্তব্য করুন