কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে কলমে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে বহু আগেই। তবু বহুদিন ধরেই ৫০ শয্যার রোগী সেবা চলছে ৩১ শয্যা দিয়েই। শয্যা সংকটের কারণে মাঝে মাঝেই রোগীদের সেবা নিতে হচ্ছে সিঁড়ি ও মেঝেতে। কেউ কেউ শয্যা সংকটের কারণে ছুটে যাচ্ছেন অন্য হাসপাতালেও। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী। এতে অবকাঠামো ও জনবল সংকটকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালাতে যে লোকবল প্রয়োজন তা দেওয়া হয়নি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। নিয়মানুযায়ী ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য পরিদর্শক থাকার কথা ২ জন, আছে ১ জন। স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা ৩০ জন, কিন্তু আছে মাত্র ১০ জন। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) থাকার কথা ১০ জন, সেখানে বর্তমানে সেবা দিচ্ছেন ৬ জন। ৫০ শয্যার হাসপাতালে নার্সের প্রয়োজন ৪৮ জন অথচ আছে ১৩ জন। ডাক্তার ১০ জনের বিপরীতে আছে ৮ জন। এদের মধ্যে ১ জন আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিটে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সবকটি পদেই নামমাত্র জনবল থাকায় এখানেও রয়েছে জনবল সংকট। অ্যাম্বুলেন্স আছে ২টি কিন্তু ড্রাইভার নেই। নেই প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীও। এ ছাড়াও অফিস সহকারী, ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যানবিদ, কম্পিউটার অপারেটর জনবলেও সংকট রয়েছে। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন প্রায় হাজার লোক চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। এক্সরে মেশিন (এনালগ) আছে, নেই টেকনোলজিস্ট। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
সরেজমিনে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১ শয্যার হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে নতুন আরও একটি ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও মেলেনি অবকাঠামো ও জনবল। ফলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ শয্যা দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। বিভিন্ন সময়ে রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে শয্যা পেতেও নিতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। আবার কেউ কেউ শয্যা না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন অন্য হাসপাতালে।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার চান্দলা এলাকার বাসিন্দা জয়দল হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই এখানেই চিকিৎসা নিতে আসি। মাঝেমধ্যে চিকিৎসা নিতে এসে শয্যা না পাওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হয়। শয্যা সংখ্যা বাড়ালে এই উপজেলাবাসী উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের অভিমত, এই হাসপাতালে আরও কিছু শয্যা বাড়ালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে এভাবে বঞ্চিত হতো না। ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যা করার জোর দাবি জানান এলাকাবাসী। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, আমরা আমাদের লোকবল দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ৫০ শয্যা হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল এবং অবকাঠামো চেয়ে চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই আমরা অনুমোদিত ৫০ শয্যায় সেবাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব।
মন্তব্য করুন