কক্সবাজারের পেকুয়ার উপকূলীয় রাজাখালী ইউনিয়নের পেছু মিয়ার বাড়ি থেকে বকশিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। যা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আতংকিত অবস্থায় সাগর উপকূলবর্তী এ ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার মানুষ চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টে সংস্কার না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে পুরো ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল।
ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল বলেন, উপকূলবর্তী রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে কুতুবদিয়া চ্যানেল তীরবর্তী পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে বকশিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার পাউবোর বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রিত এসব বেড়িবাঁধ গত পাঁচ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এভাবে সংস্কারবিহীন থাকলে বেড়িবাঁধ অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিম অংশে পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে বকসিয়া ঘোনা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারবিহীন রয়েছে। তবে তিন কিলোমিটারের পরে কিছু অংশে বেড়িবাঁধে সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। কিছু অংশে ব্লক স্থাপন করা হলেও এর পরের অংশের মাটির বেড়িবাঁধ সংস্কারবিহীন অবস্থায় রয়েছে। মাটির বেড়িবাঁধের অংশে সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সাগরের অমবশ্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারের পানির স্রোতে বেড়িবাঁধ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। পেছু মিয়ার বাড়ি থেকে বকসিয়া ঘোনা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে গত পাঁচ বছরে একাধিক পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অংশে মাটি দিয়ে ভরাটের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। তিন কিলোমিটারের মধ্যে সর্বাধিক ঝুঁকিতে আছে দেড় কিলোমিটার অংশ। রাজাখালী ইউনিয়নের পশ্চিমাংশে পেচু মিয়ার বাড়ি থেকে পশ্চিম অংশে এবং দক্ষিণ অংশে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এ পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার পথে। এরপরেও বেড়িবাঁধ সংস্কারে পাউবোর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
জানা যায়, বিগত পাঁচ বছর ধরে রাজাখালীতে বেড়িবাঁধের ওই পয়েন্টে বেড়িবাঁধের অবস্থা বেহাল। বর্তমানে সেখানে স্থানীয়রা জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকাতে রিং বাঁধ দিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমেই এই দুই পয়েন্টে মাটি ভরাটের কাজ বাস্তবায়ন না হলে নিশ্চিত রাজাখালী ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুল তার ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের আশপাশে বসবাসরত দশ হাজার মানুষের জানমাল রক্ষা করতে দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারে জরুরি অর্থ বরাদ্দ প্রদানের জন্য পাউবোর কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী দেলোয়ার হোছাইন ও আলাউদ্দিন আলো জানিয়েছেন, উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ুতে পরিবর্তন এসেছে। সাগরের পানির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েক বছর ধরে বাঁধ করবে বলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে সাগরের লোনা পানি প্রায় সময় লোকালয়ে প্রবেশ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। আগে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের বাইরের চরে বন বিভাগের ঝাউ ও প্যারাবন ছিল। সময়ের পরিক্রমায় স্থানীয় সংঘবদ্ধ বনদস্যুরা তা কেটে উপকূলকে অরক্ষিত করে তুলেছে। সে কারণেও সাগরের পানি সরাসরি বেড়িবাঁধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
জানা যায়, কয়েক বছর পূর্বে পেকুয়া ও চকরিয়ার বেড়িবাঁধগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত করেছে। পেকুয়া ও চকরিয়া পাউবোর কক্সবাজার জেলার অধীন হলেও পাউবোর বেড়িবাঁধগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বান্দরবান পাউবোর অধীনে ন্যস্ত করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়ায় পাউবোর শাখা কার্যালয় না থাকায় কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে জানতে পাউবোর কক্সবাজারের দায়িত্বরত বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বিশ কোটি বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তবে ওই বরাদ্দের মধ্যে রাজাখালীর তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সংস্কার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এ অর্থ বছরে বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করব।
মন্তব্য করুন