নওগাঁয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে দ্বিতীয় দিনের বন্ধ রয়েছে আন্তঃজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ সব রুটে বাস চলাচল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
বুধবার (১৮ আক্টোবর) সকাল থেকেই চালকরা আগের দিনের মতো গাড়ি বন্ধ রেখে এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে এই বাস চলাচল বন্ধ রাখেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
সকাল ১০টায় শহরের বালুডাঙ্গা বাস টার্মিনালে দেখা যায়, শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে না কোনো বাস। টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে আন্তঃজেলা ও জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের শতাধিক বাস। জেলা শহর থেকে থেকে ঢাকা-রাজশাহীসহ দূরের গন্তব্যে ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাওয়ার জন্য যাত্রীরা টার্মিনালে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে এসে বাস না পেয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের একমাত্র ভরসা বিআরটিসি পরিবহনের বাস, ইলেকট্রনিক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা সিএনজি। তবে ইজিবাইকে যেতে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রীকে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা হান্নান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। আবার সিএনজির ভাড়া চাচ্ছে বেশি। এখন বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই অফিসে যেতে হবে।
আরেক যাত্রী আকরাম হোসেন বলেন, আমাকে জরুরি ভিত্তিতে রাজশাহী যেতে হবে। অনেকক্ষণ ধরে বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এত দূর রাস্তা অটোরিকশা সিএনজি করে যাওয়াও সম্ভব নয়। এখন রাজশাহী যাওয়া নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।
জানা যায়, ১৬ অক্টোবর বিকেলে নওগাঁর মান্দায় ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কে অটোরিকশা চালাতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাস ও অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অটোরিকশার নিবন্ধন প্রদান, বাস মালিক গ্রুপের লাঠিয়াল বাহিনী রাস্তা থেকে প্রত্যাহার এবং অটোরিকশাচালককে মারধরের প্রতিবাদে অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। একই ঘটনার জেরে গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বাস মালিক ও শ্রমিকরা।
জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ইউনিয়নের এক সদস্যকে সিএনজি সমিতির লোকজন মারধর করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য বুধবার দুপুরে বালুডাঙ্গা বাস স্টান্ডে শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সমাবেশে বাস চলাচলের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নওগাঁ সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিক হোসেন বলেন, গত সোমবার আমাদের সাথে যে সমস্যা হয়েছেল সেই সমস্যা রাতেই বসে সমাধান হয়ে গেলে সকাল থেকে বাস-সিএনজি চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা বাস চলাচল বন্ধ রাখে। পরে জানতে পারলাম বগুড়া বাস মালিক গ্রুপের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে তারা মূলত বাস বন্ধ রেখেছে। কিন্তু আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারা সামনে নিয়ে আসছে। আমরা জনগণের ভোগান্তি যেন না হয় এই জন্য সিএনজি চলাচল স্বাভাবিক রেখেছি।
নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি আইন অনুযায়ী মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অটোরিকশা চালকেরা নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে জোর করে গাড়ি চালিয়ে আসছে। এ নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষের পর প্রশাসনের মধ্যস্ততায় দুই পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল করবে না। কিন্তু সিএনজি চালকরা এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে চলছে। সোমবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিএনজি চালানোয় বাস শ্রমিকেরা বাধা দিলে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় সিএনজি শ্রমিকেরা বাস শ্রমিকদের মারধর করেন। ওই ঘটনার জেরে সোমবার সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ডে আরেক দফা উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য শান্ত নামে এক শ্রমিক আহত হয়েছেন। এই ঘটনার বিচার দাবিতে বাসের চালক ও সহকারীরা আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার (সাময়িক দায়িত্বে) গাজিউর রহমান বলেন, নওগাঁয় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসন করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।
মন্তব্য করুন