কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে জেলার ৯ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার পরিবার। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান করলেও পড়েছেন শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় জেগে ওঠা নতুন চরগুলো প্লাবিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এখানে বসবাসরত মানুষজন।
নদের অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, পোড়ার চর ও মুসারচরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়ে এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না তারা। পাশাপাশি কোনো কাজ না থাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটেও পড়েছেন।
এদিকে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক গ্রাম। জেলার প্রায় ১শ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়াও চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর ২৬টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের সবগুলো নদ-নদীতে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সদরের ধরলার সেতু পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৮৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাট চর এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, এই চরে ৩০টিরও বেশি পরিবারের বসবাস। চরটি নতুন হওয়ায় এখানকার বেশিরভাগ ঘরবাড়িতে কোমর সমান পানি রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা ও নৌকায় বসবাস করছেন। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকমতো রান্না করতে না পারায় অনেককে একবেলা খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে এখানে।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার নুর ইসলাম বলেন, পানি কমলেও এখনো বাড়ির চারদিকে পানি। আবার পানি বৃদ্ধি পায় কিনা সেই চিন্তায় আছি। ১ বিঘা জমির পটল সব তলে গেছে। তাড়াহুড়ো করে কিছু পটল তুলেছি। বাকি সব নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যাকবলিত সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গফুর আলী বলেন, আজ শনিবার বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, কিন্তু নিচু এলাকায় এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। আমি সরকার ও বিত্তবানদের বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার ২৬টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলে ভাঙনরোধে কাজ চলছে। বন্যার পূর্বাভাসে এ সপ্তাহে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানা গেছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া আছে। নগদ অর্থ ও শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মন্তব্য করুন