দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় বিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রেমিক-প্রেমিকাকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় উপজেলা শহরের তেলীপুকুর এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং প্রেমিক চিরিরবন্দর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
ধর্ষণের শিকার কিশোরী (১৮) তিনি উপজেলার খালপাড়া গুচ্ছগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। আর প্রেমিক মাসুদ রানা (২৪) পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা এলাকার বাসিন্দা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোরী জানান, মাসুদ রানার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল দীর্ঘদিন। মঙ্গলবার সকালে মাসুদ রানা পঞ্চগড় থেকে চিরিরবন্দরে তাদের বাসায় আসে। তার মা-বাবার কাছে বিয়ের কথা জানায়। কিন্তু মেয়ের পরিবার এ বিয়েতে সম্মতি না দেওয়ায় রাত সাড়ে ৯টায় মাসুদের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে চিরিরবন্দর রেলস্টেশনে আসে। পঞ্চগড় আসার কোনো ট্রেন না পাওয়ায় হাঁটাপথে উপজেলার ঘুঘরাতলী এলাকায় বটগাছের নিচে বসে ইজিবাইকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। স্টেশন থেকে দুটি ছেলে তাদের অনুসরণ করে পিছু নেয়।
রাত ১০টায় ছেলে দুটি ঘুঘরাতলীতে এসে তাদের কাছে গন্তব্যের কথা জানতে চায়। ওই দুইজন ছেলের মধ্যে একজন মোবিন (২০)। ঘটনাস্থলে তাদের সঙ্গে যোগ হয় আরও তিন মুখোশ পরা যুবক। সব কথা শুনে মোবিন তাদের বলেন, ‘তোমরা পালিয়ে যাচ্ছ কেন? তোমরা যদি বিয়ে করতে চাও তাহলে আমরা তোমাদের বিয়ে দেব। এখানে আমাদের সভাপতির ছেলে আছে, আমরা বিষয়টা ওনাকে জানাইছি। তোমরা চলো আমাদের সঙ্গে।’
জবাবে কিশোরী তাদের বলেন, ‘ভাইয়া আমরা তো বিয়ে ম্যানেজ করেই ফেলছি, আমরা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারি। আপনারা তো আইনের লোক না। আমাদের কী হেল্প করবেন।’ এ কথা শুনে তাদের মারধর শুরু করে পরে একটা ভ্যানে জোরপূর্বক তুলে নেন আর কিশোরীর মুঠোফোন কেড়ে নেন। পরে তাদের এলএসডি সংলগ্ন একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যান।
সেখানে উভয়কে মারধর শুরু করে মাসুদকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে কিশোরীকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে কিশোরীকে ধাক্কা দিলে সে ধানক্ষেতে পড়ে যায়। তার পা জখম হয়। এ সময় সবাই ধানক্ষেতে নেমে ধর্ষণ করে কিশোরীকে।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, মোমিনকে আমি দেখেছি। বাকিরা মাস্ক পরা ছিল। নুর আলমের কথা বলে আমাকে নিয়ে গেছে। ফোনে কাকে যেন বলছিল ভাই আপনি আসেন, আমরা নিয়ে আসছি, কাজ হবে।
এদিকে বিষয়টি অবহিত করে প্রেমিক মাসুদ রানা জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেন। পুলিশ রাত আড়াইটায় ঘটনাস্থল থেকে কিশোরী ও মাসুদ রানাকে উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের বোন বাদী হয়ে বুধবার রাত পৌনে ১০টায় চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৬। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
মন্তব্য করুন