দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরইমধ্যে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।
দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বয়কটের কথা জানিয়ে দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার জন্য দলীয় নেতাদের ‘ডামি’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বান জানালে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দল থেকে নির্বাচনকে জমজমাট করতে ‘ডামি’ প্রার্থী রাখার কথা বলা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কেউই মূল প্রার্থীকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। ফলে ‘ডামি’ প্রার্থীরাই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন মূল প্রার্থীর জন্য।
দলের এমন সিদ্ধান্তে সিলেটে নড়েচেড়ে বসেছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। সিলেটের-৬ আসনের মধ্যে সিলেট-২ আসন ছাড়া বাকি পাঁচটিতেই দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা।
এর মধ্যে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি এবার সিলেট-১ ও ৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নৌকা না পেয়ে সিলেট-১ আসন থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন মিসবাহ। তিনি টানা তিনবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট জেলা জজকোর্টের পিপির দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘদিন। গত সিলেট সিটি নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্যাশী ছিলেন তিনি। সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সিলেট-২ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এ আসনে দল থেকে এর আগে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তবে তিনি সিলেট সিটি করোপোরেশন নির্বাচনে নৌকা নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় এ আসনে আর নজর দেননি। অন্য কেউ এখন পর্যন্ত শফিক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেননি।
সিলেট-৩ এ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। তবে এ আসনে দলের মনোনয়ন চাওয়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বি.এম.এ) মহাসচিব, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এছাড়াও সিলেট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চলেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক সহকারী অ্যটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু। তিনি সোমবার (২৭ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সর্বইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা মুহাম্মদ মনির হোসাইনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান এমপি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. গোলাপ মিয়া। তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সিলেট-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তবে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাসুক উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির। তিনি মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সিলেট-৬ আসনে আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ আসনে কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত এ নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মন্তব্য করুন