দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালেট বিপ্লবের মাধ্যমে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের পতন ঘটাতে চায় সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে জাফর বাহিনীর চিহ্নিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার চিহ্নিত অপরাধী ও জামায়াত-বিএনপির ক্যাডার নিয়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেন জাফর আলম। এ বাহিনীর মধ্যে উপজেলা ও পৌরসভায় অপরাধ জগতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ভাতিজা জিয়াবুল এবং ভাগিনা মিজানুর রহমান। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন তার অনুগত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। তাদের অত্যচারে গত পাঁচ বছর তটস্ত ছিল দুই উপজেলার সাধারণ মানুষ। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় জাফর আলমের বিরুদ্ধে মুখ খুলেতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। ব্যালেটের মাধ্যমে জাফর আলমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন বলে জানিয়েছেন তারা। তবে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু করতে চিহ্নিত অপরাধী এবং অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাতিজা জিয়াবুল হক ও ভাগিনা মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে থাকা জাফর বাহিনীর চিহ্নিত অপরাধীরা হলেন পালাকাটা এলাকার বর্মা হানিফ, ইয়াসিন আরফাত মার্শাল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জয়নাল হাজারি, সদর ঘোনার আব্দুল জলিল প্রকাশ গণি সওদাগর, একই এলাকার ইউসুফ ডাকাত, ফাঁসিয়াখালীর ফাইরাখালীর শামসুল আলম প্রকাশ বন্দুক শমসু, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রকাশ কালা নজরুল, যুবলীগ নেতা ফোরকানুল ইসলাম বনদস্যু ফোরকান, ওসমান গণি প্রকাশ দাদা ওসমান।
এ ছাড়া একাধিক মামলার আসামি ববি হাজ্জাদ ইমন, বিএমচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বদিউল আলম, শাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান ও ডজন মামলার আসামী নবী হোছাইন, চিরিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান জামাল হোসাইন চৌধুরী, সাবকে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন প্রাকশ রুবেল, সাবেক ছাত্রদল ক্যাডার ও ডুলাহাজা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদারও জাফর বাহিনীর চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে পরিচিতি।
এ তালিকায় আরও ছাড়া আছেন তারা হলেন পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর ও উপজেলা বিএনপির সাবেক আপ্যায়ণ বিষয়ক সম্পাদক শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম, রাজাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেড় ডজন মামলার আসামি চিহ্নিত ডাকাত ছৈয়দ নুর, আনছার উল করিম টিপু, জহির উদ্দিন, আলেকদিয়া কাটা এলাকার মোজাম্মেল হক, শিলখালী মেহেরনামার কাইসার ভূট্টো, বিলহাছুরা এলাকার ইউপি সদস্য মুহাম্মদ মানিক, উজানটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ জামাল, উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম এবং টৈটং এর চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী।
পেকুয়া উপজেলা যুবলীগ ত্রাণ ও সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক মো. আজমগীর জানান, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে নির্বাচনকালীন সময় শান্ত পরিবেশ অশান্ত হতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে জাফর বাহিনীর সব ক্যাডার ও তাদের নির্দেশদাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এক কথায় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে হলে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের কোনো বিকল্প নেই।
শাহারবিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল বলেন, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে থেকেই আমরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে চকরিয়া-পেকুয়ার বিষয়ে জানানো হয়েছে। হয়তো প্রতীক বরাদ্দের পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের তৎপরতা শুরু করবে প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) রকিবউর রাজা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। বৈধ সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যেন আইন মেনে বাঁধাহীন প্রচারণা চালাতে পারে এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয় দেখতে আমাদের উপর নির্দেশনা রয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে চিহ্নিত অপরাধী এবং অস্ত্রধারীদের দ্রতই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন