মোখলেছুর রহমান, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

দুধকুমার নদের চরাঞ্চলে বেগুনের বাম্পার ফলন

দুধকুমার নদের জেগে ওঠা চরের বালু মাটির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বেগুন চাষ করেছেন কৃষকরা। ছবি : কালবেলা
দুধকুমার নদের জেগে ওঠা চরের বালু মাটির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বেগুন চাষ করেছেন কৃষকরা। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের জেগে ওঠা চরের বালু মাটির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রচুর বেগুন চাষ হয়েছে। বালুময় জমিতে বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চরাঞ্চলের বালুময় মাটিতে বেগুন চাষ করে সফল হচ্ছে চাষিরা। চাষিরা বলছেন, বেগুন ক্ষেতের দিকে তাকালে দু’চোখ জুড়িয়ে যায়, ভরে যায় মন। তাই চলতি মৌসুমে বেগুন বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন বেগুন চাষিরা।

চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এবছর বেগুনের ফলনও বেশ ভালো। দামও ভালো পাচ্ছে কৃষক।

উপজেলার দুধকুমার নদের চরাঞ্চল পাইকের ছড়া ইউনিয়নের পাইকডাঙ্গা, ছিটপাইকেরছড়া, তিলাই, সোনাহাট ও বলদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের চাষিরা নিজের ও অন‍্যের জমি বর্গা বা লিজ নিয়ে ব‍্যাপক পরিমাণে বেগুন চাষ করেছেন। সফলতাও পাচ্ছে কৃষক। এ বছর বেগুনের ফলন ও দাম দুটাই তুলনামূলকভাবে ভালো।

কৃষিবিদদের মতে, দুধকুমার নদ বিধৌত চরাঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রতি বছর রবি মওসুমে এই উপজেলার দুধকুমার নদের তীরবর্তী শত শত হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়ে থাকে। স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচের বেগুন চাষে অধিক টাকা আয় করে থাকেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই স্থানীয় কৃষকরা বেগুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের বেগুন উপজেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে।

চলতি বছর বন্যা কম হওয়ায় চাষিরা আগাম বেগুন চাষ করেছেন। দুধকুমার নদের চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বেগুন, শীতের সবজি হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক কদর ও সুখ্যাতি রয়েছে। এই অঞ্চলের উৎপাদিত সাদা, কালো ও বল বেগুন দেশের চাহিদা মিটাচ্ছে। এ ছাড়াও বেগুন চাষ লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে বেগুন চাষির সংখ্যা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বেগুনের বিভিন্ন জাতের মধ‍্যে বারি বিটি-১২ বারি বিটি-২ বারি বিটি-৪ ইসলামপুরী, শিংনাথ, খটখটিয়া ও স্থানীয় জাতের বেগুন চাষ হয়ে থাকে। তবে চলতি বছর প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এই লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বেগুন বিক্রি করে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভ করতে পারবে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগের দাবি।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমান বাজার এক কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। বেগুন চাষিরা জানিয়েছে তাদের উৎপাদিত বেগুন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন না। তাদের বেগুন সপ্তাহে একবার করে উঠানো হয়। সেই বেগুন ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। ঢাকার ব‍্যাবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেন ৮৫০ টাকা দরে।

বেগুন চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৩২ শতাংশের এক বিঘা জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বেগুনের চারা রোপণ করা যায়। ফল আসতে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে। এসময় পর্যন্ত সেচ, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যাবাবদ কৃষকদের খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। আবহাওয়া ও জমির উর্বরতা ভালো হলে টানা তিন মাস প্রতি সপ্তাহে থেকে ৪০ থেকে ৪৫ মণ বেগুন তুলে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। গড় হিসাবে এ তিন মাসে বিঘা প্রতি উৎপাদন হয়ে থাকে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ মণ বেগুন। পাইকারি গড় হিসাবে ১৫ টাকার দরে বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে কৃষকের খরচ বাদে লাভ হয় প্রচুর।

উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পাইকেরছড়া গ্রামের কৃষক ছালাম জানান, আমার নিজের জায়গা জমি নাই। তাই আমি দুধকুমার নদের ছিট পাইকেরছড়ার চরে ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো। এখন পযর্ন্ত আমি বেগুন বিক্রি করেছি প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এবছর আমি গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে বেগুন চাষ করেছি।

পাইকের ছড়ার ফুটানীবাজারের কৃষক আফজাল বলেন, চরের বেশিরভাগ বেগুন চাষিরা বাড়িতে রাখা সবুজ ঢোলা বেগুন চাষ চাষ করেন। চরের জমিতে এই বেগুনের ফলন অনেক বেশি এবং বাজারে এর চাহিদা ও দাম তুলনামূলক বেশি। তবে এই বেগুনের বীজ বাজারে পাওয়া যায় না। বাজারের বীজ পেলে ফলন অনেক বেশি হত।

অপর এক কৃষক বলেন, আমাদেরকে সঠিক সময়ে যদি বিএসরা (উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) সঠিক পরামর্শ দিতো। তারা আমাদের কোনো খোঁজ-খবরই রাখেন না। ফোন করেও তাদেরকে পাই না। আমরা গ্রামের মানুষ, চাষাবাদ করেই সংসার চালাই। তাদের সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আমরা আরও লাভবান হতাম।

উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের কৃষক জব্বার ও সোনাহাট ইউনিয়নের কৃষক ছাত্তার বলেন, আমরা আমাদের জমিতে বেগুন গাছের চারা লাগিয়েছি। এটাকে গাছ মনে করি না, মনে করি টাকার গাছ। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও ভালো ফলন হবে। তাই দিন রাত রোদে পুড়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছি অধিক লাভের আশায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘চলতি বছর এই অঞ্চলে বন্যা কম হওয়ায় কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি বেগুন চাষে। তাই তারা আমাদের পরামর্শে আগাম বেগুন চাষে মাঠে নেমেছেন। এ উপজেলায় বারি-১২ বারি-২ ও বারি-৪ সহ স্থানীয় জাতের বেগুন বেশি উৎপাদন হয়ে থাকে। এ ছাড়াও বোম্বাই বেগুন, লম্বা বেগুন ও বাগলতি (ফম বেগুন) বেগুন নামে আরও তিন জাতের বেগুনের চারা রোপণ করা হয়েছে। এই উপজেলার মাটি পলি দো-আঁশ হওয়ায় এখানে বেগুন চাষ বেশি হয়। আমরাও কৃষকদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি ও বেগুন চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে এই অঞ্চলে আরও বেশি বেশি বেগুন চাষে আগ্রহী হয় কৃষক।

তবে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে না পাওয়া যাওয়ার কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফের গোলাগুলি শুরু, উত্তেজনা তুঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নাক গলাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

আরব সাগরে ভারতের অভিযান, টার্গেটে পাকিস্তান

০৯ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

০৯ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

অবশেষে গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী

১১

১৭ দিন পর রাজশাহী পলিটেকনিকে খুলল তালা

১২

শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের স্লোগান, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

১৩

স্বাস্থ্য পরামর্শ / মায়ের গর্ভেই থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

১৪

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ

১৫

মরদেহ দাফনের পাঁচদিন পর বাবা জানলেন সন্তান জীবিত

১৬

দেশজুড়ে ভারতের ২৪টি বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা

১৭

সাবেক মেয়র আইভীকে আটকের খবরে বাড়ি ঘেরাও

১৮

পাকিস্তানের মিসাইল বৃষ্টি, অন্ধকার ভারত

১৯

ভারতের প্রত্যাঘাত ছিল অ-উত্তেজক ও সুনির্দিষ্ট : বিক্রম মিশ্রি

২০
X