গোবিন্দ দেব, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে চান হেভিওয়েট মান্নান

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও  সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের বিরুদ্ধে বরাবরের মতো এবারও লড়বেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী। গত কয়েক দিন ধরে শাহীনুর পাশা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন এমন গুঞ্জন থাকলেও শাহিনুর পাশা নিজেই এটি পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনমুখী নয়, তারা এমন অপপ্রচার দেয়।’ তিনি নিজের বাড়িতে ‘গ্রাম প্রতিনিধি’ বৈঠক করে এবার অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হবে ঘোষণা দিয়ে সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শাহীনুর পাশা চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ছেন। তার নিজের বাড়ির গ্রাম প্রতিনিধি সভায় বিএনপির কিছু সমর্থকও ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুবরণ করলে শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সামান্য ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক যুগ্ম সচিব এমএ মান্নানকে পরাজিত করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এম এ মান্নান আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হন। সেই নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে শাহিনুর পাশা চৌধুরী ৫৬ হাজার ৪৭১ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। এমএ মান্নান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৬ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে টানা তিনবারের এমপি এম এ মান্নান। চতুর্থবারের মতো এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এমএ মান্নান। বিএনপি ও শাহীনুর পাশার নিজের দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ভোটে না গেলেও দল থেকে পদত্যাগ করে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে ভোটে লড়ছেন শাহীনুর পাশা।

নির্বাচনী মাঠে এমএ মান্নান ও শাহীনুর পাশা দুজনেই সক্রিয়। রোববার এম এ মান্নান ছোটখাটো নানা কর্মসূচি ছাড়াও মিরপুর ইউনিয়নের লহরী গ্রামে উঠান বৈঠক করেছেন। উঠান বৈঠক হলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ এই সভায় উপস্থিত হন। অন্যদিকে শাহীনুর পাশ তার নিজের গ্রাম পাটলী ইউনিয়নের মিনহাজপুরে ‘গ্রাম প্রতিনিধি’ বৈঠক করেছেন। শাহীনুর পাশার এই বৈঠকে তার পুরোনো অনেক কর্মীও উপস্থিত ছিলেন।

আপনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন, আপনার সঙ্গে বিএনপি-জমিয়তের কোনো কর্মী নেই, এমন প্রচার আছে ভোটের মাঠে। এই প্রশ্নের উত্তরে শাহীনুর পাশা কালবেলাকে বলেন, যারা নির্বাচনমুখী নয়, তারা এমন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমার সমর্থক ভোটারদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা এটি। আমার শুভানুধ্যায়ী-কর্মীরা কেউ আমাকে ছেড়ে যাননি। মান অভিমানে রয়েছেন কেউ কেউ, আমি যখন ফোন দিয়ে বুঝিয়ে বাস্তবতার কথা বলছি, সকলেই সক্রিয় হচ্ছেন। তিনি বললেন, আমার কর্মীদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এবার ভোট সুষ্ঠু হবে। আমার গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত গ্রাম প্রতিনিধি সভায় জগন্নাথপুরের ২৭৪ গ্রামের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নানের দল আওয়ামী লীগ এবার অন্য নির্বাচনগুলোর চাইতে ঐক্যবদ্ধ। এই আসনের অপর দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডনের স্ত্রী-পুত্র ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর ছবি ফেসবুকে শুক্রবার প্রচার হওয়ায় দলের ঐক্যে হাওয়া লেগেছে। জগন্নাথপুর উপজেলার ডনের সমর্থক অনেকেই মান্নান বলয়ে মিশে কাজে সক্রিয় হয়েছেন। জগন্নাথপুরের ডন সমর্থকরা নিরব থাকলেও বিক্ষুব্ধদের মন্তব্যে বুঝা গেছে, তারা নৌকার পক্ষেই কাজে থাকবেন।

ওই উপজেলার ডন সমর্থক হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রশিদ ভুইয়া কালবেলাকে বলেছেন, ‘দলীয় প্রার্থীসহ কেউই এখনো ডাকেননি। অপেক্ষা করছি, দেখি কী হয়, না ডাকলে নীরব থাকব।’

এই অংশের আরেক নেতা বীরেন্দ্র সুত্রধর বললেন, আমাদেরকে ডাকা হচ্ছে না। না ডাকলে আলাদা প্লাটফরমে থেকে নৌকার পক্ষে প্রচারে নামব।

জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বললেন, জগন্নাথপুর আওয়ামী লীগ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। ভিন্নমতের যারা ছিলেন, তারাও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। আমাদের টার্গেট এবার কেন্দ্রে ভোটার বাড়ানো। এ জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে কেন্দ্রভিত্তিক আলাদা আলাদা কমিটি হচ্ছে। এই কমিটিগুলোর কাজ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এমএ মান্নান বললেন, কেন্দ্রে ভোটার বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনী এলাকাজুড়ে। ভোটাররা আওয়ামী লীগ ও আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল। তা ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় দেওয়া উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়েছে। কেন্দ্রে আসলে আমাদেরকেই ভোট দেবেন ভোটাররা।

এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন, জাকের পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী মিনার, জাতীয় গণফ্রন্টের তালুকদার মকবুল হোসেন। যাচাই-বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমান খালেদের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসনাত আবদুল্লাহর স্পষ্ট বিবৃতি

মশার ওষুধ ছেটানো কর্মীদের কাজ এক ঘন্টা কমিয়ে দিল ডিএনসিসি

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা

নতুন নেতৃত্বে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি

সমুদ্রে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু

চলমান আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের নয় : শিবির সভাপতি

ফুটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্র নিহত

৪০০ ড্রোনে ভারতের ৩৬ শহরে পাকিস্তানের হামলা

ভারতের সীমান্ত এলাকায় নিহত ২২, হাজারো মানুষ ঘরছাড়া

আইপিএল স্থগিতে প্রতি ম্যাচে বিসিসিআইয়ের ক্ষতি ১৬২ কোটি টাকা!

১০

নাটোরে ২ রাউন্ড গুলিসহ পিস্তল উদ্ধার

১১

‘জাতীয় সনদ নাগরিকের সব অধিকার সুরক্ষিত করবে’

১২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: ২৪ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছে

১৩

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাবে পেছাচ্ছে বাংলাদেশের সিরিজ

১৪

সাইবার আক্রমণের শিকার ভারতীয় সেনাবাহিনী

১৫

গরম নিয়ে দুঃসংবাদ, বৃষ্টি কবে জানাল আবহাওয়া অফিস

১৬

‘জানাজা ছাড়াই আওয়ামী লীগকে কবর দিন’

১৭

পাকিস্তানে মার্কিনিদের সাবধানে থাকার নির্দেশ

১৮

মোস্তফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে জামায়াত আমিরের শোক

১৯

মোদির শহরে ৩ ঘণ্টা উড়ল পাকিস্তানের ড্রোন

২০
X