১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচবিবির আকাশে স্বগৌরবে উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত বিজয় পতাকা। পাঁচবিবি হয়েছিল হানাদারমুক্ত। এদিন প্রত্যুষে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে শ’ দেড়েক মুক্তিযোদ্ধা বিজয়ীর বেশে ভারত (হিলি, পশ্চিমবঙ্গ) থেকে পা রাখেন বাংলাদেশের মাটিতে।
পাঁচবিবি উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা ভুইডোবা গ্রাম হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ১০টার দিকে পাঁচবিবি সদর থানা চত্বরে পৌঁছলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলু। এরপর তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম আব্দুল মোতালেব ও খন্দকার আলমগীর হোসেনের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দলবলসহ চলে যান জেলা সদরের দিকে। ১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবি ছিল বৃহত্তম হাটবার। শত্রুর কবলমুক্ত পাঁচবিবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবরে শত শত মানুষ অভিনন্দন জানানোর জন্য ছুটে আসেন থানা চত্বরের দিকে। মুক্তিযোদ্ধারা জনতার কোলাহলের ভেতরে গগণবিদারী জয়বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় অসংখ্য ফাঁকাগুলির শব্দ, করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের ন্যায় পাঁচবিবি লাল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মোতালেব। জেলার মধ্যে পাঁচবিবি থানা প্রথম পাকবাহিনীর দখলে যায়, আবার শত্রুমুক্ত হয় সবার আগে।
১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) হাটের দিন পাঁচবিবি ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত ছিল। ওই দিন দুপুর ১২টায় পাক বাহিনীর দল ফেচকাঘাট হয়ে পাঁচবিবির দিকে আসে এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ওই দিন পাক বাহিনীর গুলিতে নিহত হন দানেজপুর গ্রামের সাত্তার পাগলা, দিবাকরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম, দড়ি বিক্রেতা রমজান আলী, দামোদরপুর গ্রামের ইয়াকুব আলী ও থানা আক্রমণকালে পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য। এ ছাড়া হাট থেকে চিরতরে নিখোঁজ হন আয়মারসুলপুর গ্রামের হাজী মনির উদ্দিন হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক বিমল কুমার কুন্ডুসহ আরও অনেকে। পাঁচবিবি হাটে রাস্তার এক পাশেই ননীগোপাল কুন্ডুর দোকানে স্বাধীন বাংলা মানচিত্র খচিত বিজয় পতাকা। গুলিতে ঝাঝরা হয়ে যায় ননী গোপাল কুন্ডুর ও তার পতাকা। তার ভগ্নিপতি নীলমনি কুন্ডুও আহত হন এবং পরে মারা যান।
মন্তব্য করুন