কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিন্ধুরমতি গ্রাম থেকে বিপন্ন প্রজাতির মদনটাক (হারগিলা) পাখি আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। এ সময় পাখিটির একটি ডানা ভাঙা ছিল। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পাখিটিকে চট্টগ্রামের শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্ক রাঙুনিয়া পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে বন বিভাগের আওতায় কুড়িগ্রামের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক সদস্য মো. আব্দুর রশিদ, সাইদ ও জুয়েল রানা আহত মদনটাকের খবর পেয়ে সিন্ধুরমতি গ্রামে যান। সেখান স্থানীয় রতনের বাড়ি থেকে মদনটাক পাখিটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে কুড়িগ্রাম সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে ভেটিনারি চিকিৎসা দেওয়া হয়।
গ্রিন ভিলেজ প্রতিষ্ঠাতা মো. আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা সামাজিক কাজ করে থাকি। পাশাপাশি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবক সদস্য। আহত মদনটাক পাখির খবর পেয়ে আমরা সিন্ধুরমতি গ্রামে গিয়ে রতনের বাড়ি থেকে পাখিটি উদ্ধার করি।
রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোল্লা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মদনটাক পাখিটিকে আহত অবস্থা উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রেখে ভেটেনারি চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পাখিটিকে চট্টগ্রামের রাঙুনিয়া শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকোপার্কে পাঠানোর হয়েছে।
তিনি বলেন, মদনটাক পাখি আইইউসিএন-এর লাল তালিকায় রয়েছে। এটি এখন বিপন্ন প্রজাতির পাখি হিসেবে পরিচিত।
এদিকে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা জানান, ‘মদনটাক’ লম্বা ঠোঁটের বিশালদেহী জলচর পাখি। এটি ‘হাড়গিলা’ নামেও পরিচিত। পাখিটির দুটি প্রজাতি থাকলেও বড় মদনটাক দেশ থেকে আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে খুব অল্প সংখ্যক ছোট মদনটাক এখনও টিকে আছে। পাখিটির আদি নিবাস সুন্দরবন হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও কখনও কখনও দেখা মেলে। হয়তো খাবারের খোঁজে বা পথভ্রষ্ট হয়ে এটি মাঝেমধ্যে লোকালয়ে চলে আসে।
তিনি বলেন, জলাশয়ের আশেপাশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিঃসঙ্গ বা বড়জোর জোড়ায় বিচরণ করতে দেখা যায়। কারণ প্রজনন মৌসুম ছাড়া বেশিরভাগ সময়ই মদনটাক একাকী থাকতে পছন্দ করে। মাছ এদের প্রধান খাদ্য হলেও এরা ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাঁকড়া প্রভৃতি বিভিন্ন জলজ প্রাণী খায়। মদনটাক সাধারণত অনেক বড় গাছে বাসা বাঁধে এবং স্ত্রী পাখিটি তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। বন্য পরিবেশে এদের আয়ুষ্কাল ১৫-১৬ বছর।
জোহরা মিলা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল তালিকা অনুযায়ী পাখিটিকে ‘সংকটাপন্ন প্রজাতি’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী এটি শিকার, হত্যা বা এর যে কোনো ক্ষতিকরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মন্তব্য করুন