দুর্ঘটনায় দুই হাত হারালেও নিজ মনোবল ও প্রতিভার জোরে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পরিশ্রমী দেলোয়ার হোসেন খান। তবে দেলোয়ারের স্ত্রী চান সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক সহায়তার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানরা তাদের পাশে এগিয়ে আসুক। যদিও বিসিক কর্মকর্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান দিয়েছেন দেলোয়ারের পাশে থাকার আশ্বাস।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ১৫নং রুপসা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব গাব্দেরগাঁ গ্রামে গেলে দেলোয়ারের এ প্রতিভা দেখা যায়।
স্থানীয় ফাতেম বেগম বলেন, চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী এ যুবকের দুই হাত হারাতে হয় এক বিভীষিকাময় দুর্ঘটনায়। এর পরও জীবিকা নির্বাহে থেমে না থেকে নিজ মনোবলে কঠোর পরিশ্রমে তিনি কখনো চাকরি আবার কখনো ব্যবসায় মনোনিবেশ করে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। বর্তমানে দেলোয়ার নিজ বাড়িতে গরু-বাছুর পালন, চায়ের দোকান ও গাছের চারার বেচাকেনার কাজে সময় কাটাচ্ছেন। তার এ পরিশ্রমকে স্বার্থক করছেন স্ত্রী কোহিনুর বেগম। বর্তমানে দেলোয়ারের স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। যারা সবাই পড়ালেখা করছে।
সমাজসেবক কামরুল হাসান সাউদ বলেন, দেলোয়ার হচ্ছেন তার পিতা হাজী সফিউল্লাহ খানের ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে চতুর্থ। ২০০৩ সালে ঢাকার একটি হাসপাতালে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করাকালীন রডের সঙ্গে লেগে থাকা বৈদ্যুতিক তারে তিনি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হোন। পরে চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে দুহাত কেটে ফেলে দেন।
২০০৫ সালে বিবাহের পর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শারীরিক প্রতিবদ্ধকতাকে জয় করে তিনি ঘুরে দাঁড়ান। দেলোয়ার নিজ ব্যবসা পরিচালনার জন্য হাত না থাকা সত্ত্বেও সাইকেল, ভ্যান ও মোটরসাইকেল চালানো রপ্ত করেন। তার বানানো চায়ের টুংটাং শব্দে চা পান করতে আসেন নানান শ্রমজীবী মানুষ। শুধু তাই নয় অবসরে তিনি কেরাম খেলেও গ্রামে বিনোদনময় সময় কাটান।
এ বিষয়ে দেলোয়ার বলেন, বর্তমানে আমি চায়ের দোকানের আয়ে লাভবান না হওয়ায় গাছের চারা কিনে সেগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। আর বাড়তি উপার্জনের জন্য বাড়িতে গবাদিপশু হিসেবে গরু পালন করছি। সরকারি সহায়তা বলতে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া আমার কপালে এখন পর্যন্ত আর কিছুই জোটেনি।
তিনি আরও বলেন, জীবিকার চাহিদায় আমি কখনো এনজিওতে চাকরি, কখনো চায়ের দোকান, কখনো আবার গাছের চারা বিক্রি করছি। এত কিছুর পরেও সংসারের অভাব যেন আমার পিছু ছাড়ছে না। ঋণ নিয়ে কী করব? ওই টাকা পরিশোধের মতো ক্ষমতা আমার নাই, তাই কোনো সংস্থা ঋণের কথা বললে আমি আগ্রহ দেখাই না।
দেলোয়ারের স্ত্রী কোহিনুর বলেন, প্রতিভা সমাজের জন্য উদাহরণ হলেও তার ঘরের হাঁড়ি থাকে প্রায়ই খালি। তাই তার পাশে সমাজের সবাইকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ দিকে দেলোয়ারের চারা বিক্রিসহ উদ্যোক্তাময় প্রতিভা জেলা বিসিক কর্মকর্তা আহসান হাবিব মামুন এবং উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. তছলিম আহমেদকে অবগত করলে তারা তার পাশে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে দেলোয়ারকে সমাজে টিকিয়ে রাখতে আর কোনো আশ্বাস নয় বরং নানান সুযোগ সুবিধার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান দেলোয়ারের পরিবারবর্গ।
মন্তব্য করুন