প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলসহ বিভিন্ন বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি এসেছে। এসব পাখি দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাখিপ্রেমিকরা আসেন বাইক্কা বিলে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থেমে নেই পাখি শিকার। শিকারিরা নানা কৌশলে শিকার করছে দেশি-বিদেশি পাখি।
শিকারের এই চিত্র প্রতিনিয়তই দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল হাইল হাওর এবং বাইক্কা বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে। শিকার করা এসব পাখি বেশি দামে বিক্রির লোভে নানা কৌশলে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন শিকারিরা। প্রতি বছর শীতে হাইল হাওরে এসব শিকারির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এবারও এই অঞ্চলে পাখি শিকারিদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। তবে বিলের সৌন্দর্য রক্ষায় বাইক্কা বিল প্রকল্প চালু, বিল খনন করাসহ বিলের আয়তন বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণে চরম অবহেলার পাশাপাশি মাছের জন্য বিখ্যাত বাইক্কা বিলে অবৈধভাবে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হওয়ায় বাইক্কা বিল সৌন্দর্য যেমন হারাচ্ছে তেমনি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, খাবারের সঙ্গে বিষটোপ বানিয়ে বিলে ফাঁদ পেতে রাখা হয়। এসব বিষটোপ খেয়ে মারা যাচ্ছে অতিথি, পরিযায়ীসহ নানা প্রজাতির পাখি।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকা থেকে খাজা মিয়া নামে এক পাখি শিকারিকে বেশকিছু পরিযায়ী পাখি ও পাখি ধরার সরঞ্জামসহ আটক করা হয়। এ সময় তাকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়াও মৌলভীবাজারের থানা বাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ৮টি পাখিসহ আটক আব্দুস শহীদকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালাত। পাশাপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।
হাইল হাওর এলাকার বাসিন্দা সফল মিয়া জানান, হাইল হাওরের পাশাপাশি বিলের এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর ও হাজীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় শিকার করা পাখি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, অবাধ শিকারের কারণে পাখিদের পরিসর যেমন সীমিত হয়ে আসছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে এর প্রজনন ও আবাস্থল। অতিথি পাখির আগমনের এ সময়টিতে শিকারিরা বেশি সক্রিয় থাকে।
শ্রীমঙ্গল বাইক্কা বিল বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সভাপতি পিয়ার আলী জানান, বাইক্কা বিলের মাছ রক্ষার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাই পাখিদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। পাখির নিরাপত্তার জন্য সরকারিভাবে পাহারাদার বাড়ানো হলে পাখি শিকার কমে আসবে।
সার্বিক বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পাখি শিকার বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাখি শিকারিদের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সচেতনতা কার্যক্রমও চালিয়ে আসছেন তারা। তারপরও তেমন সুফল মিলছে না।
মন্তব্য করুন