কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৩৫ প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান তুহিন

প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ করেন কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন। ছবি : কালবেলা
প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ করেন কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন। ছবি : কালবেলা

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা ৩৫ প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ারসহ বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। খুলনার পাইকগাছার লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন এসব উপহার দেন।

রোববার (৪ ডিসেম্বর) সকালে কাগুজী প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের আয়োজনে লক্ষ্মীখোলা কলেজিয়েট স্কুলের মাঠে এসব বিতরণ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বিতরণ অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ কে এম মেছবাহুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা অনাথ কুমার বিশ্বাস, চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়ার্দার, আওয়ামী লীগ নেতা সমিরন সাধু, আনন্দ মোহন বিশ্বাস, লিপিকা ঢালী, অহেদুজ্জামান মোড়ল, প্রভাষক বাবলুসহ অনেকে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন তার নানাবাড়ি থেকে ফেরার পথে পাইকগাছার চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকায় দেখতে পান, এক মা তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রতিবন্ধী মেয়ে তাসলিমাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, প্রতিদিন প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুল থেকে আবার নিয়ে আসেন। কিছু দিন পর ওই মেয়েকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেন তুহিন। তার লেখাপড়ার দায়িত্বও নেন তিনি। সেই থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আরিফুজ্জামানের পথচলা শুরু। তাসলিমা খাতুন এখন পাইকগাছা সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়েন।

এখন তুহিন তার এলাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার খরচ বহন করা, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ, হুইলচেয়ারসহ সহায়ক উপকরণ দেওয়া, ঘর বানিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করছেন তিনি নিজের টাকায়। ১৮ বছর ধরে প্রতিবন্ধীদের সেবা করে যাচ্ছেন। এখন তার তথ্যভাণ্ডারে ২৮৫ জনের মতো প্রতিবন্ধীর নাম রয়েছে। যাদের তিনি নানাভাবে সহযোগিতা করছেন।

এ জনপ্রতিনিধি তুহিন কাগজী নামে এলাকায় পরিচিত। পেশায় তিনি ঘের ব্যবসায়ী। বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের লক্ষ্মীখোলা গ্রামে। লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান তিনি।

সম্প্রতি কথা হয় সেই তাসলিমার সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাবা দিন মজুর ছিলেন। এখন অসুস্থ থাকায় কাজ করতে পারেন না।

তাসলিমা বলেন, ‘জন্ম থেকেই দুই পা অচল, হাঁটতে পারি না। ছোটবেলায় অন্যদের স্কুলে যেতে দেখে আমাকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার বায়না ধরেছিলাম। তখন বাড়ির আশপাশের অনেকেই আমার মা-বাবাকে নিষেধ করেছিলেন আমাকে স্কুলে ভর্তি করতে। পরে দেখা যায়, আমি স্কুলে প্রথম হয়েছি। তুহিন কাকুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন সব খরচ তিনিই বহন করেন। তিনি না থাকলে এতদূর আসা হতো না।’

আরও ১৫-১৬ জনের পড়ার খরচ দেন তুহিন। এ ছাড়া ১০ জন প্রতিবন্ধীকে ঘর বানিয়ে দিয়েছেন, হুইলচেয়ার দিয়েছেন ২৮৫ জনকে, শ্রবণযন্ত্র দিয়েছেন প্রায় ৬০ জনকে, পড়াশোনার খরচ দিচ্ছেন ১৬ জনকে, বছরে বই-খাতা কিনে দেন ৩০ জনকে, পানি জন্য টাংকি দিয়েছেন ১৫টি, পানির ফিলটার ৫০ জনকে, স্কুল-কলেজে ভর্তি করেছেন ৪০ জনকে, সারা বছরের খাওয়ার জন্য খোরাকি দেন ১৫ প্রতিবন্ধীকে, থাকার জন্য খাট দিয়েছেন ৫টি, টিউবওয়েল দিয়েছেন ৫টি, কম্পিউটার কিনে দিয়েছেন ২টি, দোকানসহ মালামাল কিনে দিয়েছেন তিনজনকে। কৃত্রিম পা বানিয়ে দেওয়ার খরচ দিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি। তার কাজের বিস্তৃতি পাইকগাছা উপজেলাসহ খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায়।

রবি সানা ও রনি সানার বাড়ি উপজেলার সোলাদানা গ্রামে। প্রতিবন্ধী তারা দুই ভাই এবার এসেছেন বই উপহার নিতে। রবি পড়ে পাইকগাছা সরকারি কলেজে আর রনি নবম শ্রেণির ফাস্ট বয়। প্রতিবন্ধকতা তাদের আটকাতে পারেনি। চেয়ারম্যান তুহিন তাদের লেখা পড়ার সব খরচ দিচ্ছেন।

তেমনি খায়রুল ইসলামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামে। খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দিন দিন চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন, বাড়িতেই থাকতেন। বছরখানেক আগে তাকে একটি কম্পিউটার কিনে দিয়ে গোয়ালডাঙ্গা বাজারে দোকান করে দেন তুহিন। এখন সেই দোকান থেকে আয় করেই সংসারের খরচ মেটান খায়রুল।

এক প্রশ্নের জবাবে তুহিন বলেন, তার ও তার পরিবারের মালিকানায় প্রায় ৩০০ বিঘা মাছের ঘের আছে। পাইকগাছা বাজারে একটি মাছের আড়ত রয়েছে। এসব থেকে যে আয় আসে, তার একটা অংশ দিয়ে প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করেন তিনি।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে তাকে। অনেকেই তাকে ‘পাগল’ বলেও সম্বোধন করতেন। কিন্তু দমে যাননি তিনি। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নিজস্ব স্লোগান বানিয়েছেন- ‘প্রতিবন্ধীরা প্রতিভাবন্দি নয়, ওরাও মানুষ।’ গড়ে তুলেছেন ‘কাগজী প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামে একটি সংগঠন।

এসব বিষয়ে কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন কালবেলাকে বলেন, ‘যেদিন কোনো প্রতিবন্ধীর সহায়তায় কাজ করতে পারি, সেদিন রাতেই সবচেয়ে ভালো ঘুম হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করতে পারাটাই আমার নেশা।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সৌদিগামী যাত্রীদের জন্য সুখবর

এমবাপ্পের একমাত্র গোলে রিয়ালের কষ্টার্জিত জয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

১০

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

১১

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১২

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১৩

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১৪

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৫

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৬

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৭

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৮

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৯

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

২০
X