রোবটিক আর্ম বা মানবদেহে সংযোজনের জন্য কৃত্রিম হাত তৈরি করে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় বরিশালে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে আগৈলঝাড়ার ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম পাল।
যেখানে বিদেশ থেকে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে কৃত্রিম হাত আমদানি করতে হয় সংযোজনের জন্য সেখানে ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের উদ্ভাবিত কৃত্রিম হাত তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা।
প্রীতম বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানবিভাগের শিক্ষার্থী। আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের শিহিপাশা গ্রামের বাসিন্দা এবং রাজিহার ইউপি সচিব গৌতম পাল ও গৃহিণী কাজলী পালের বড় সন্তান। প্রীতম গৈলা মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞানবিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী।
বরিশাল সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ মেলায় মানবদেহের জন্য কৃত্রিম হাত প্রদর্শন করে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে প্রীতম। প্রীতমের এই সাফল্যের জন্য বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিথীকা সরকার স্বাক্ষরিত সনদপত্র তার হাতে তুলে দেন অতিথিরা।
প্রীতম জানায়, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সারা দেশসহ সারাবিশ্বে অনেক মানুষ তাদের হাত হারায়। বেঁচে থাকার জন্য বাকি জীবন তারা কর্মহীন হয়ে পরে। এমন মানুষের জন্যই আবিষ্কৃত রোবটিক আর্ম বা কৃত্রিম হাত মানবদেহে সংযোজন করা যেতে পারে। মানবদেহে এই কৃত্রিম হাত সংযোজন করলে যেখানে মানুষের হাত পৌঁছানো সম্ভব নয় এমন ভারী যান্ত্রিক স্থানেও এই কৃত্রিম হাত অনায়াসে কাজ করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবেই এই হাত দুই থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে সক্ষম। হেভিওয়েট হাত হিসেবে এর স্থায়িত্বও অনেক বেশি।
প্রীতম আরও জানায়, বাবার কাছ থেকে নেওয়া পড়ালেখার খরচ থেকে কিছু অর্থের সঞ্চয় করে প্রথমে এই উদ্ভাবনী কাজে মনোযোগ দেয় সে। কালক্রমে উদ্ভাবনী বিষয়টি তার সহপাঠী ও বাবাও জানতে পারে। বাবা তাকে উৎসাহিত করায় মাঝেমধ্যে বাবার কাছ থেকেও চেয়ে নিত অর্থ। নিজের সঞ্চয় ও পরিবারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় শুরু করে এই রোবটিক আর্ম এর পেছনে। নিরলস পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের কারণে প্রীতমের দেখা স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয় তার মানবকল্যাণের উদ্ভাবনীতে।
দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিদেশ থেকে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে কৃত্রিম হাত আমদানি করে তা সংযোজন করে আসছেন। তবে ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতমের উদ্ভাবিত কৃত্রিম হাত তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়ন তথা মানবদেহে কৃত্রিম হাত সংযোজনের মাধ্যমে একজন মানুষকে স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য কৃত্রিম হাত বা রোবটিক আর্মের যুগোপযোগী উন্নয়ন ও সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারজাত করতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তার উদ্ভাবন নিয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ক্ষুদে বিজ্ঞানী প্রীতম।
প্রীতমের বাবা ইউপি সচিব গৌতম পাল জানান, তার ছেলের উদ্ভাবন নিয়ে তিনি আনন্দিত। মানবকল্যাণে কাজ করায় ছেলের আর্থিক চাহিদা পূরণ করে আসছেন তিনি। তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পড়ালেখার পাশাপাশি তার উদ্ভাবনীতে আরও সাফল্য পাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মন্তব্য করুন