রাত পোহালেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত বরণ উৎসবে মাতবে দেশ। এ দিনকে ঘিরে সারা দেশেই ফুলের চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। দেশের চাহিদার ৭০ শতাংশ ফুল সরবরাহ করা হয় ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী পাইকারি ফুলের বাজার থেকে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এ মোকামে সব ধরনের ফুলের দাম কমেছে। চাষিরা বলছেন গত তিন দিনের তুলনায় শেষ দিনের বাজারে ফুলের দাম কমেছে কয়েকগুন।
এ দিনে কাকডাকা ভোর থেকেই সর্বোচ্চ সংখ্যক চাষি এ মোকামে ফুল নিয়ে এসেছিলেন। অধিকাংশ ফুলচাষির অভিযোগ ভালোবাসা দিবসের আগে শেষ দিনের বাজারে ফুলের দাম বেশি থাকার কথা থাকলেও ঘটেছে উলটো।
মঙ্গলবার গদখালী ফুলের মোকামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। একদিন আগে সোমবার সে গোলাপ বিক্রি হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। গোলাপের সর্বোচ্চ দাম ছিল রোববার ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
মঙ্গলবার প্রতি পিস রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১১ থেকে ১২ টাকা, এক দিন আগে যেটা ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস প্রতিটি মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, একদিন আগে যেটা ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ টাকা, গতদিন যেটা ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে ২ থেকে আড়াই টাকা, আগের দিন এ ফুলের দাম ছিল ৩ থেকে ৫ টাকা।
অবশ্য এদিন গাঁদা ফুলের দাম অপরিবর্তিত ছিল। প্রতি হাজার গাঁদা বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
হাড়িয়া গ্রামের ফুলচাষি আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের আশা ছিল শেষ বাজারে ২০ থেকে ২২ টাকা গোলাপ বিক্রি করবো কিন্তু এলসির গোলাপ আসার কারণে আমাদের আশা পূরণ হয়নি। গোলাপের দাম কমার কারণে কালার ভুট্টা ফুলের দামও কমেছে।
সৈয়দপাড়া গ্রামের আতর আলী বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের বড় লগ্ন ছিল, আমরা ক্ষেতে ফুল স্টক করেছিলাম। গোলাপের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধার দাম কমে গেছে। এ বছর প্রকৃতির মারে ফুলে পচন লেগেছিল। এখন দামের মারে আমরা লস খাচ্ছি। কাঁচামাল (ফুল) বাইরে থেকে আনার কারণে আমাদের কোমর ভেঙে যাচ্ছে।
হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের রাসেল হোসেন বলেন, ভালোবাসা দিবসের আগে ১১, ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি গোলাপের সর্বোচ্চ দাম থাকে। কিন্তু এলসির গোলাপ আসার কারণে দাম কমে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সকাল ৮টার মধ্যে বাজার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ১১টায়ও বাজারে গোলাপ থেকে গেছে।
হাড়িয়া গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, আমরা সারা বছর ফুলের চাষ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি আর ২১ ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় থাকি। এ বছর ভালোই দাম ছিল কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গোলাপ আমদানি করে আমাদের শেষ করে দিয়েছে। পথে বসার মতো অবস্থা আমাদের। যে গোলাপ ২৫ থেকে ২৬ টাকা বিক্রি হয়েছে সেই গোলাপ আজ ৮ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এ বছর রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে ফুল বেচাকেনা হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা দামে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর গোলাপ আমদানির কারণে গোলাপের দাম অনেক কমেছে। সেই প্রভাব অন্য ফুলেও পড়েছে।
উল্লেখ্য, গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলে প্রায় ১২শ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হয়। এ অঞ্চলের ৬ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতি বছর সাড়ে তিনশ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়।
মন্তব্য করুন