অভয়নগরে যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেন (৩০) হত্যার ৪৮ ঘণ্টা পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহতের বোন লিলি বেগম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে হেঁটে তরফদার পাড়ার বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন যুবলীগ নেতা মুরাদ। বাড়ির অদূরে কবরস্থানের কাছে পৌঁছালে ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার একটি হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ভুঁড়ি বের করে ফেলে। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা বেরিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর দিন স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের নেতৃত্বে লাশ নিয়ে নওয়াপাড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। সেখানে হত্যার বিচারসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
নিহত মুরাদ হোসেন উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহাবুল ইসলামের ছেলে।
মৃত্যুর আগে ৫ খুনির নাম বলে গেছেন যুবলীগ নেতা মুরাদ। পরে এ ঘটনা বাদী হয়ে নিহত মুরাদের বোন লিলি বেগম মামলা করেন।
আসামিরা হলেন, শাহীন ফারাজী, কেএম আলী, ছালাম শেখ (কাউন্সিলর), আজিম শেখ, রিপন গাজী, বিল্লাল হোসেন, রহুল আমিন খা, আলমগীর শেখ, রাসেল মিনা ও বাবলু। এছাড়া ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করা হয়।
নিহতের বোন লিলি বেগম জানান, অভয়নগরে হত্যার শিকার যুবলীগ নেতা মুরাদ হোসেন (৩০) মৃত্যুর আগে ৫ খুনির নাম বলে গেছে। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে।
মুরাদের ছোট ভাই ফরহাদ রেজা জানান, তার ভাইকে পৌর কাউন্সিলর সালাম শেখের নেতৃত্বে শাহীন ফরাজি, আলী, রাসেলসহ ১০ থেকে ১২ হামলা চালিয়ে হত্যা করে। তার দাবি, রাজনৈতিক কারণেই মুরাদকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আটক ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
মুরাদের পিতা সাহাবুল ইসলাম বলেন, আমার বড় ছেলে মুরাদ হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে পৌর কাউন্সিলর সালাম শেখের বিরোধ ছিল। মুরাদ ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সে মেনে নিতে পারেনি। মারা যাওয়ার আগে আমার ছেলে সালাম শেখসহ কয়েকজনের নাম বলে গেছে। সাহাবুল ইসলাম আরও বলেন, ওই খুনিরা এর আগেও এলাকার কয়েকজনকে মারধর ও হত্যায় জড়িত। বিশেষ করে পৌর কাউন্সিলর সালাম শেখ এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিল।
থানার ওসি এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মুরাদ হোসেনের সঙ্গে এলাকার একটি পক্ষের দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে দুপক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
ওসি জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মুরাদ হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার পর মুরাদ হোসেন দুই ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিলেন। এ সময় তিনি হত্যায় জড়িত কয়েকজনের নাম বলে গেছেন। আমরা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন