সাধারণত মেলায় সকলের যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এই মেলায় কেবল যেতে পারেন নারীরা। এমনকি মেলার বিক্রেতারাও সবাই নারী। মেলায় ক্রেতা-বিক্রেতা নারী হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের নারীদের এই মেলায় স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে দেখা যায়।
বগুড়ায় গাবতলীতে দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ বা জামাই মেলার পরের দিন জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয় বউ মেলা। মেলার গেটে পুরুষরা থাকলেও তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামে বসে ব্যতিক্রমী এই বউ মেলা। গত ৩০ বছর ধরে পোড়াদহ মেলার পরের দিন ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে এই মেলা।
গোলাবাড়ী বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীর শাখা গাড়ীদহ খালের তীর ঘেঁষে প্রায় দুশ বছর ধরে মাঘ মাসের শেষ বুধবার সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। বিশাল আকৃতির মাছের জন্য বিখ্যাত এ মেলা উপলক্ষে প্রতি বাড়িতে নতুন বউ-জামাই যেমন আসেন, তেমনি পুরোনো আত্মীয়স্বজন কেউ বাদ পড়েন না।
কিন্তু সেসব আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেবলমাত্র পুরুষরাই পোড়াদহ মেলায় যাওয়ার সুযোগ পান। নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় মেলায় নারীরা প্রবেশ করতে পারেন না। এ অবস্থায় নারীদের জন্য পোড়াদহ মেলার পরের দিন বউ মেলার আয়োজন করা হয়।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, ত্রিপল ও সামিয়ানা টানিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। সকাল থেকেই এলাকার সকল বয়সী মেয়েরা কেনাকাটার জন্য মেলায় আসতে থাকে। দুপুরের দিকে মেলা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী মেলার প্রধান আকর্ষণ হলেও তার সঙ্গে স্থান পায় চুড়ি, মালা, ফিতা ছাড়াও হরেক রকমের সাজ-সরঞ্জাম।
এমনকি বাসনপত্রও পাওয়া যায় এই মেলায়। মূলত নারীদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হলেও মায়েদের কোলে চড়ে কিংবা হাত ধরে মেলায় বেড়াতে আসা শিশুদের জন্য থাকে নানারকম খেলনা, বেলুন, খাদ্য সামগ্রী ও নাগরদোলা।
চট্টগ্রাম থেকে মেলায় চুড়ি-ফিতার দোকান নিয়ে আসা আঙ্গুরী বেগম বলেন, পোড়াদহ মেলার পরদিন বউ মেলা হয়। বেচাকেনা ভালো। গত ১২-১৩ বছর ধরে এই মেলায় দোকান নিয়ে আসছি।
বগুড়া সদরের চেলোপাড়া এলাকার অজিরন বেওয়া নামে এক নারী বিক্রেতা জানান, জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তাই চুড়ি-ফিতা সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হয়। ফলে বেচতেও হয় বেশি দামে।
স্থানীয় রতন পাল ও রাজিবুল বলেন, বাড়ির বউদের নিয়ে মেলায় এসেছি। ওরা ভেতরে কেনাকাটা করছে। যেহেতু মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ তাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
মেলায় ঘুরতে আশা জমিলা খাতুন বলেন, পোড়াদহ মেলার পরের দিন এই বউ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে কোনো পুরুষ আসেনা। আর এখানে বিক্রেতারাও নারী। তাই এই মেলায় আমরা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারি।
বউ মেলার আয়োজক জাহিদুল ইসলাম বলেন, পোড়াদহের মেলায় পুরুষদের ভিড়ের কারণে এলাকায় নারীরা যেতে পারেনা। তাই শুধুমাত্র নারীদের জন্য এই বউ মেলার আয়োজন করা হয়। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই নারী। এখানে কোনো দোকানিকে টোল দিতে হয় না। তাই প্রতি বছর দোকানের সংখ্যা বাড়ছে।
মেলা পরিদর্শনকালে গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, পোড়াদহ জামাই মেলার পরদিন বউ মেলার আয়োজন করা হয়। যেহেতু নারীদের মেলা তাই এখানে নিরাপত্তায় নারী পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
গাবতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বন্যা বলেন, বউ মেলা ব্যতিক্রমী একটি আয়োজন। যেহেতু আমি নারী, তাই এখানে পরিদর্শন করতে এসে ভালো লাগল। মেলার দোকানদার ও ক্রেতা সবাই নারী। আমরা মেলার শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
মন্তব্য করুন