নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীকে ধাপে ধাপে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে তিন টাকা মূল্যের টিকিট ৫ টাকা ও জরুরি বিভাগে ৭ টাকা মূল্যের টিকিট ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়াও রোগীদের বিনামূল্যের ড্রেসিং সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও দিতে হয় ৫০ থেকে ২০০ টাকার বেশি।
এভাবেই হাসপাতালে প্রবেশের পর থেকে শুরু হয় হয়রানি। হাসপাতালের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের দ্বারা হয়রানির শিকার হন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার ফলে হাসপাতালটি এখন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার আতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বাথরুম, বেসিন ও ফ্লোরের অবস্থা খুব অপরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডের ফ্লোর জীবাণুনাশক দিয়ে মোছা হয় না দীর্ঘদিন। শুধু ঝাড়ু দেওয়া হয়। নোংরা পরিবেশের মধ্যে হাসপাতালের বেডে নাকে কাপড় দিয়ে থাকতে হয়।
চিকিৎসা সেবাগ্রহীতারা বলেন, বিনামূল্যে যেসব সেবা পাওয়ার কথা, টাকা না গুনলে এর সামান্য সেবাও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেলে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।
জানা যায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশর বেশি বিভিন্ন রোগী টিকিট কেটে চিকিৎসা সেবা নেন। এখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য সরকারিভাবে ''ফি নির্ধারণ'' করা হয়েছে ৩ টাকা এবং জরুরি বিভাগের জন্য ৭ টাকা।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কমপক্ষে ২০ জন রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকিটের মূল্য হিসাবে কারও কাছ থেকে ১০, কারও কাছ থেকে ৭ আবার কখনো কারও কাছ থেকে ৫ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া যেসব রোগী দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য কারণে ড্রেসিং করেছেন তাদের সবাইকে ৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। এছাড়া রোগীকে সেলাই বা প্লাস্টারের ধরনের ওপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়।
পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফজলুল হকের পায়ের সেলাই কাটাতে ৫০ টাকা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, পায়ের ক্ষতস্থানের ড্রেসিং করতে পরপর দুই দিন আসতে হয়েছে। বিনামূল্যের ড্রেসিং করাতে ২০০ টাকার মতো বকশিশ দিতে হয়েছে। মূলত এখানে টাকা ছাড়া সরকারি সেবা পাওয়া যায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেসিং করার দায়িত্ব মূলত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের। কিন্তু সেটি করে অফিস সহায়ক ও ওটিবয়গণ।
ড্রেসিংরুমে দায়িত্ব পালন করা অফিস সহায়ক আব্দুল হালিম ও ওটিবয় ফরিদুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, রোগীর লোকজন অথবা আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে ৫০-১০০ টাকা দেন। কখনো কেউ জোর করে দেন। আমরা চেয়ে নিই না।
টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা জমশেদ আলী ও মামুন বলেন, খুচরায় ঝামেলা হয়। তাই টিকিটের মূল্য ৫ টাকা নিই। বিষয়টি টিএইচওসহ সকলেই জানেন। যাদের নিকট থেকে ৫ টাকার বেশি রাখা হয়, তাদের টিকিটের পিছনে লিখে দিই। পরে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়।
মামুন বলেন, অন্য সব উপজেলায় বহির্বিভাগে টিকিটের মূল্য দশ টাকা। সেই হিসাবে আমরা কম নিচ্ছি। এটা অনিয়ম কিনা জানতে চাইলে মামুন বললেন, আমি যোগদানের পর থেকেই দেখছি এভাবেই নিচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে সব চিকিৎসাসেবাই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কেবল এক্স-রে, প্যাথলজি, বহির্বিবিভাগ এবং জরুরি বিভাগের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি দিতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বহির্বিবিভাগে টিকিটের মূল্য তিন টাকার বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বেশি নিয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড্রেসিং সেবা কক্ষেও টাকা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন