

মাসিকের সময় অনেক নারীই পেটব্যথা, ক্র্যাম্প এবং অস্বস্তিতে ভোগেন। এসব ব্যথা স্বাভাবিক হলেও দৈনন্দিন কাজকর্মকে কঠিন করে তোলে। অনেকেই ব্যথা কমাতে প্রাকৃতিক উপায় খুঁজে থাকেন, আর হার্বাল চা সেই দিক থেকে খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকর একটি সমাধান।
আরও পড়ুন : শীতের শুরুতেই চামড়া শুকিয়ে রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করুন নিজেকে
আরও পড়ুন : ৩৫ বছরেই যে কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক
বিভিন্ন ভেষজ চা শরীরকে শীতল রাখে, পেশি শিথিল করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, ফলে মাসিকের পেট ব্যথা অনেকটাই কমে। চলুন জেনে নিই এমন কিছু ভেষজ চায়ের বিষয়ে।
পেপারমিন্ট চা
পেপারমিন্ট একটি সুগন্ধিযুক্ত ভেষজ, যা মিন্ট পরিবারের অন্তর্গত। পেপারমিন্ট হজমজনিত বিভিন্ন সমস্যা কমাতে সাহায্য করে যেমন- গ্যাস, ফুলে যাওয়া, বদহজম যা অনেক সময় মাসিকের সময় বেড়ে যায়। এটি পেশি শিথিল করতে সহায়তা করে, ফলে ক্র্যাম্প ও প্রদাহ কমে।
২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পেপারমিন্ট এক্সট্র্যাক্ট সেবনের পর ব্যথা, তার তীব্রতা এবং অন্যান্য উপসর্গ অনেকটাই কমে যায়, যদিও রক্তস্রাবের পরিমাণ তেমন পরিবর্তন হয়নি।
রোজ বাড চা
গোলাপ কুঁড়ির চায়ে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহ কমায়) এবং অ্যান্টি স্পাজমোডিক (পেশির খিঁচুনি কমায়) গুণ, যা জরায়ুর পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এতে মাসিকের ক্র্যাম্প ও অস্বস্তি কমে।
এ ছাড়া গোলাপ চা মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে, যা মাসিকের সময় হওয়া মুড সুইং, দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজ টি মাসিকের ব্যথার তীব্রতা কমাতে এবং PMS–এর (মাসিকের আগের মানসিক ও শারীরিক উপসর্গ) মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপায়।
আদা ও হলুদ চা
আদা ও হলুদ, দুটোই খুব শক্তিশালী প্রদাহ নাশক ভেষজ। এগুলো প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা মূলত মাসিকের সময় ক্র্যাম্প তৈরি করে।
একটি গবেষণায় ১৬৮ জন নারী শিক্ষার্থীর ওপর দেখা গেছে, প্রতি ৬ ঘণ্টা পর ২০০ মিগ্রা আদা খেলে ব্যথা কমাতে ওষুধ Novafen- এর মতোই কার্যকর ফল পাওয়া যায়। আরেকটি ২০২৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদ প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন কমিয়ে এবং হরমোন ব্যালান্স ঠিক রেখে মাসিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পুদিনা চা
পুদিনা চায়ে মেন্থল থাকে, যা একটি প্রাকৃতিকভাবে পেশি শিথিলকারী উপাদান। এই ঠান্ডা অনুভূতি দেওয়া যৌগটি জরায়ুর টান কমাতে এবং ক্র্যাম্পের ব্যথা হালকা করতে সাহায্য করে। ২০১৯ সালের এক গবেষণাতেও দেখা গেছে যে পেপারমিন্ট অয়েলের মেন্থল পেশির খিঁচুনি কমাতে পারে, ফলে পেটের ক্র্যাম্পও কম অনুভূত হয়।
দারুচিনি চা
অনেক নারীই পিরিয়ডের সময় মিষ্টি কিছু খেতে চান। দারুচিনি চা সেই ইচ্ছে পূরণ করে, আবার ব্যথাও কমাতে সাহায্য করে। এর স্বাভাবিক মিষ্টি আর হালকা মসলাদার স্বাদ পানীয়টিকে আরও আরামদায়ক করে তোলে। প্রাচীন চীনা ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় দারুচিনি ব্যবহার করা হয় প্রদাহ কমানো ও রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য।
আরও পড়ুন : খালি পেটে যে ৩ খাবার খেলে হতে পারে বিপদ!
আরও পড়ুন : শীতে সুস্থ থাকার সহজ ৭ উপায়
২০২০ সালের একটি গবেষণায়ও দেখা গেছে যে দারুচিনি শরীরের প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে পারে।
ক্যামোমাইল চা
ক্যামোমাইল চা সত্যিই একধরনের সুপারস্টার পানীয়। প্রাচীন মিশর ও রোমে এটি ব্যবহার করা হতো শান্তি এবং আরাম আনার জন্য। পিরিয়ডের অস্বস্তি কমাতে ক্যামোমাইল চা খুবই জনপ্রিয়। এতে থাকা প্রদাহবিরোধী এবং পেশি শিথিলকারী উপাদান, যেমন এপিজেনিন খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ঘুম ভালো করতে এবং ক্লান্তি কমাতেও সাহায্য করে।
সূত্র : Health Line
মন্তব্য করুন