শীত এলেই খাদ্য তালিকায় যে জনপ্রিয় ও উপাদেয় খাবারের নাম যোগ হয়, তা কোথাও কুমুড়বড়ি কোথাও বা কুমড়াবড়ি নামে পরিচিত। এবার শীতের আগমনী বার্তায় এই জনপ্রিয় খাবারটি তৈরির ধুম পড়েছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাবলা গ্রামজুড়ে। ওই গ্রামের মানুষের দেখাদেখি আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও চলছে কুমড়াবড়ি তৈরির প্রচেষ্টা। মাশকলাই বা মাশের ডাল থেকে শুধু শীতের মৌসুমেই তৈরি হয় এই সুস্বাদু খাবারটি। আর তা বছরজুড়ে সংরক্ষণ করে রাখেন গৃহিণীরা। দেশব্যাপী কুমড়াবড়ির চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সেসব।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর থেকে তালোড়া সড়ক ধরে ২ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত গ্রাম সাবলা। শীতের শুরু থেকে শুরু করে পুরো মৌসুমের যেকোনো দিন ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথেই চোখে পড়ে সারি সারি চালা তৈরি করে তার ওপরে শুকাতে দেওয়া হয়েছে কুমড়াবড়ি। আর বাড়ির ভেতরে নারী-পুরুষরা ব্যস্ত বড়ি তৈরিতে।
ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় গৃহবধূ শোভা রানী মোহন্ত, উপলা রানী ও রিমা মোহন্তের সঙ্গে। তারা জানান, মাশের ডালের সঙ্গে পরিপক্ব কুমড়ার রস মিশিয়ে এই বড়ি তৈরি করা হতো ,এ কারণেই এর নাম হয়েছে কুমুড়বড়ি বা কুমড়াবড়ি।
প্রস্তুত প্রণালি সম্পর্কে তারা জানান, বাজার থেকে মাশকালাই কিনে এনে মাড়ানোর পর তা ঝেড়ে নিতে হয়। মাড়ানো মাশের ডাল পানিতে ভেজানো হয় খোসা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। ভেজা ডালের খোসা ছড়িয়ে নিয়ে তা পাটায় পিষতে হয়। পাটায় পিষে নরম করে তা দিয়ে গোলাকৃতির বড়ি তৈরি করা হয়। সেসব বড়ি পাতলা কাপড়ের ওপর রেখে বাইরের মাচায় রোদে শুকাতে হয়। প্রায় ৩দিন শুকানোর পর তা খাবার উপযোগী হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্র মোহন্ত, শ্যামল কুমার ও সুরেশ চন্দ্র জানান, সাবলা হিন্দুপাড়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীতলা ও বাঁকপাল গ্রামের কিছু লোকও এখনও কুমড়াবড়ি তৈরি করছেন। কুমড়াবড়ি তৈরির পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও বগুড়া শহর, রংপুর, দিনাজপুর ও গাইবান্ধা থেকে উত্তরাঞ্চলের পাইকাররা এবং অনেক সময় ঢাকা থেকেও পাইকার এসে বড়ি কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে তারা ভালো মানের কুমড়াবড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি এবং সাধারণ বড়ি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
তারা জানান, কুমড়ার রসযুক্ত বড়ির দাম বেশি, আর মাশের ডালের সঙ্গে চালের আটা মিশ্রিত সাধারণ মানের বড়ির দাম তুলনামূলক কম। তবে বাজারে সাধারণ বড়ির চাহিদাই সবচেয়ে বেশি।
ওই গ্রামে পাইকারি দরে কুমুড়বড়ি কিনতে যাওয়া বগুড়া শহরের পাইকার নাজমুল হোসেন জানান, অন্য কোথাও একই গ্রামের শতাধিক পরিবার কুমড়োবড়ি তৈরি করে না। শীতের মৌসুমে এই গ্রামের মানুষের বড়ি তৈরিই মূল পেশা। এ কারণে সেখানে তারা চাহিদামাফিক এবং সঠিক ওজন ও দামে বড়ি কিনতে পারেন। বগুড়া শহরে ছাড়াও তিনি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কুমড়াবড়ি সরবরাহ করেন বলে জানান নাজমুল।
মন্তব্য করুন