আলু কুড়িয়ে সংসারের চাহিদার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করেন নওগাঁর নিয়ামতপুরের হতদরিদ্র কিছু পরিবার। প্রতি বছর আলু কুড়িয়ে সেটি কয়েক মাসের জন্য সংরক্ষণ করেন তারা। কেউ কেউ সে আলু বিক্রি করে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বটতলী বাজারের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে কয়েক শত হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। চাষিরা তাদের জমি থেকে আলু উত্তোলন শেষে আলু কুড়ানোর জন্য জমি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। সেই জমিগুলোতে আলু খুঁজতে বেরিয়েছেন শত শত মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যেন কেউ বাদ নেই। তবে এদের বেশি অংশই হচ্ছে আদিবাসী নারী-পুরুষ। কেউ জমির মাটি খুঁড়ে, কেউ বা আবার হালের পেছনে ঘুরে আলু কুড়িয়ে থাকেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করেছেন কৃষকরা।
আলু কুড়াতে আসা মোশারফ, প্রতীব সাহা, সঞ্জীব দাস বলেন- সংসারে সারা বছরই আলু লাগে। এগুলো আলু বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হয়। তাহলে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। এসব আলু দিয়ে কয়েক মাস সংসার চলে।
গিতা রানী বলেন, এখন বাড়িতে তেমন কোনো কাজকাম থাকে না। তাই আলু কুড়াতে এসেছি। কৃষকরা আলু নিয়ে যাওয়ার পর জমি ছেড়ে দেয়। আমরা কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে থাকা আলু বের করে আনি।
আলু উত্তোলনকারী শ্রমিক মোহসীন আলী বলেন, এখন গ্রামে তেমন কোনো কাজকাম থাকে না। তাই আলু তুলতে এসেছি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। আলু তুলে দিয়ে ৩০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই। এতো অল্প পারিশ্রমিক দিয়ে কোনো রকম টেনেটুনে সংসার চালাই।
আলু চাষি ইব্রাহিম বলেন, তিন বিঘা জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করেছি। গরু দিয়ে হালচাষ করে শ্রমিক দিয়ে আলু তুলেছি। এরপরও কিছু আলু মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। সে আলুগুলো গ্রামের মানুষ কোদাল দিয়ে কুড়িয়ে নেয়। এবার আলুর ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে আলুর দামও বেশ ভালোই আছে।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল হাসান বলেন, একটি পরিবারে সারা বছরেই আলুর চাহিদা থাকে। এখন আলু তোলার মৌসুম। জমি থেকে চাষিরা আলু উত্তোলন শেষে সবার জন্য জমি উন্মুক্ত করে দেয়। এতে করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা আলু কুড়িয়ে এনে সংসারের চাহিদা মেটায়। গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে আলুর দামও বেশ ভালো থাকায় আলু চাষিরা লাভবান হচ্ছে।
মন্তব্য করুন