দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ফরিদপুরের সদরপুরের কৃষকেরা চাষ করে যাচ্ছে একটি ফল; যার নাম লালমি। শীতের দুই মাস বাদে বছরের যেকোনো সময় লালমির চাষ করা যায়। লালমি দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতোই। দেখতে একই হলেও তা হাত দিয়ে ধরলে বা দেখলেই লক্ষ্য করা যায় যে এতে বাঙ্গির মতো গায়ে কোন শির নেই। রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও আছে কিছু পার্থক্য।
লালমি দেড় থেকে দুই মাসের মাঝেই পেকে যায়। উপজেলার বেশিভাগ কৃষকেরা রমজানকে টার্গেট করেই লালমি জমিতে আবাদ করে থাকে। দেড় মাস আগে বৃষ্টির কারণে লালমির কিছু গাছ মারা যাওয়ার ফলে, এ বছর আগের বছরের চেয়ে ফসল কম হয়েছে। আবার অনেক কৃষকের গাছ মারাও গিয়েছে; ফলে দ্বিতীয় ধাপে রোপন করায় ফলে এবার প্রথম রমজানে লালমি বাজারে দেখা যায়নি। কিন্ত পনের রোজার পর থেকে বাজারে লালমি উঠতে শুরু করেছে। লালমি ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষকদের উদ্ভাবিত ফসল। এই উপজেলার কৃষকেরাই এই ফলের নাম দিয়েছে লালমি।
স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ১৯ বছর আগে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী এলাকার আলিম খাঁন লালমির আবাদ করেন। তার লালমি চাষে আগ্রহ থেকে গ্রামের অন্য কৃষকেরা লালমির আবাদ করেন। শীত ছাড়া বছরের যে কোনো সময় আবাদ করা যায় লালমি। রমজান মাসে লালমির চাহিদার কারণে রমজানের দুই থেকে দেড় মাস আগে লালমি আবাদ করা হয়। লালমি হালকা পানীয় জাতীয় ফসল হওয়াতে ইফতারের সময় মানুষ লালমির জুস খেতে অনেক পছন্দ করেন। সারাদিন রোজা রাখার পর লালমির জুস শরীরকে সতেজ করে তোলে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই এই লালমি সদরপুর উপজেলায় ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হয়। তবে সদরপুর সংলগ্ন নগরকান্দা, ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন উপজেলার কিছু অঞ্চলেও ধীরে ধীরে এই ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।
সদরপুরের ভাষাণচর ইউনিয়নের এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, লালমি চাষে বিঘাপ্রতি খরচ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়েও বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। এ বছর তিনি ১৮ শতাংশ জমিতে লালমি চাষ করেছেন। এবার বৃষ্টিতে ফলন একটু কম হয়েছে, দামও আগেরবার এর তুলনায় এবার কম।
ভাঙ্গার মানিকদাহ এলাকার কৃষক সুমন মাতুব্বর এ বছর তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে লালমি চাষ করেছেন। এবার যে অনুয়ায়ী খরচ হয়েছে, তাতে তেমন লাভবান হবেন না।
সদরপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট বসেছে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালী, মটুকচর, নতুন বাজার ও বাঁধানোঘাট এলাকায়। এ ছাড়া পিয়াজখালী, আকোটেরচর, কারীরহাট, চরবিষ্ণুপুরসহ একাধিক জায়গায়ও বসেছে লালমির হাট। এর মধ্যে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালী এলাকার হাট সবচেয়ে বড় এবং বেচাকেনা বেশি।
কাটাখালী এলাকার ব্যাপারী গনি ফকির বলেন, ২০ থেকে ২৫ ট্রাক লালমি প্রতিদিন এই অঞ্চল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার শ্যামবাজারে যাওয়ার পরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় এই লালমি।
লালমির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদরপুর কার্যালয়ের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, লালমি বাঙ্গিসদৃশ একটি ফল। লালমি সদরপুর এলাকার কৃষকেরাই সর্বপ্রথম উৎপন্ন করেছেন। এ বছর সদরপুরে ৩৫০ হেক্টর জমিতে লালমির চাষ হয়েছে। আবার প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে লালমির উৎপাদন হয় ১৩ থেকে ১৪ মেট্রিক টন। সে হিসাবে, উপজেলায় এবার লালমি উৎপাদন হবে কমবেশি সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন। এই লালমি বিক্রি করে উপজেলার কৃষকেরা ৩০ কোটি টাকার মতো পাবেন।
মন্তব্য করুন