অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ধাপে চূড়ান্ত তালিকায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ৪৩টি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বীরনিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর আগে বীরনিবাসের নির্মাণকাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘরের অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। এতে বীরনিবাস নির্মাণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলার একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে হরিরামপুরে ৪৩টি বীরনিবাস নির্মাণকাজ পান মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজ। এক বছরে অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোনো ঘরের চার দেয়ালই কেবল নির্মাণ হয়েছে। আবার কিছু ঘরের ছাদ পেটানোর পরেই থমকে গেছে নির্মাণকাজ। এমন ধীরগতিতে কাজ করায় ক্ষুব্ধ অনেক বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার। বসতঘর ভেঙে বীরনিবাস নির্মাণের জায়গা দেন তারা। কিন্তু ঘর সম্পন্ন না হওয়ায় আবাসন পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট করে জীবনযাপন করছেন বলে একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার দাবি করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো কোনো বীরনিবাসের শুধু চারটি দেয়াল উঠেছে। কিছু ঘর ছাদ পেটানো হলেও কাজ বাকি ঢের। অভিযোগ করে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, চার পাশের দেয়াল করে গেছে ৭-৮ মাস হলো, আর কোনো খবর নেই। উপজেলা প্রশাসনের কেউ একদিনও এসে দেখল না, কী নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাল্লা ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, আজ ৭-৮ মাস ধরে চার পাশের দেয়াল গেঁথে গেছে। আর কোনো খোঁজখবর নেই। যারা কাজ করছে তারাও ঠিকমতো কাজ বোঝে। আর কেউ কোনো খোঁজখবরও নেয় না। ফেব্রুয়ারি মাসেই বীরনিবাস পাওয়া আমার সাথী ভাইদের পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা দুনিয়া থেকে চলে গেছে। তারা এই ঘর দেখে যেতে পারল না। ঘরে শুয়ে যাওয়া ভাগ্যে জুটল না। আমিও কবে জানি চলে যাই। ঘরে শোয়ার ভাগ্য আমারও হবে কি না জানি না।
জগৎবেড় গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আন্দুল জলিল জানান, ছয়মাস আগে চারপাশের দেয়াল গেঁথে চলে গেছে আর কোনো খবর নেই। থাকার ঘর ভেঙে এই বীরনিবাসের জায়গা দিয়েছি। এটা কাজ শেষ না হওয়ায় আমার খুব সমস্যা হচ্ছে। জিনিসপত্র সব বাইরে বের রাখছি। সামনে বৃষ্টির দিন আসছে। এখন তো আমাদের থাকতে খুব কষ্টে হচ্ছে। কাজ ধরবে ধরবে করে আর কাজ ধরছে না।
নাওডুবি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আমজাদ হোসেন চৌধুরীর ছেলে হ্যাপি চৌধুরী জানান, এক বছর ধরে কাজ শুরু হয়েছে। এখনও ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ধরে নাই। শুধু চারপাশের দেয়াল করা হয়েছে। সেটাও ৭-৮ মাস আগে। এর মধ্যে আর কোনো কাজ হয়নি। প্রায় একমাস আগে ইউএনওর অফিসে ঠিকাদারসহ আমাদের সবাইকে ডেকেছিল। তখন বলা হয়েছিল তিন দিনের মধ্যে আবার কাজ ধরা হবে। কিন্তু তারপর থেকে এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি।
সুতালড়ী ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুস সোবহানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, গত রোজায় প্রথম কাজ শুরু হয়। কোরবানি ঈদের সময় ছাদ ঢালাই দেয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আট কোনো কাজ হয়নি। আমার এই ভিটার থাকার ঘরটি ভেঙে এই বিল্ডিংয়ের জায়গা দিয়েছি। এই ঘর কমপ্লিট না হওয়ায় আমাদের থাকার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি অসুস্থ মানুষ। যেভাবে কাজ চলছে তাতে এই ঘর দেখে যেতে পারব কি না সন্দেহ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাফি ট্রেডার্স এর স্বত্বধিকারী আল রাফি দৈনিক কালবেলাকে জানান, বিল পাই না তাই কাজ করতে পারছি না। বিল পেলে কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান কালবেলাকে জানান, এতো দিন বাজেট ছিল না। আমরা সঠিকভাবে টাকা পাইনি। এখন আমরা টাকা পাচ্ছি। আশা করি দুই আড়াই মাসের মধ্যে সকল বাসা কমপ্লিট হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ৪৩টির মধ্যে ৭টি বাসা কমপ্লিট হয়েছে। মূলত সমস্য ছিল এতদিন ঠিকাদার বিল পাচ্ছিল না, তাই কাজের গতি কম ছিল। আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছি, শোকজ করেছি। একাধিকবার মন্ত্রণালয়েও চাপ দেওয়া হয়েছে। এখন কাজের গতি অনেকটা ভালো। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। আশা করছি, কোরবানি ঈদের মধ্যে সব বাসা কমপ্লিট হবে।
মন্তব্য করুন