বগুড়ায় প্রায় ১০ বছর নিশ্চুপ ছিল জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা। অনেকে ছিলেন আত্মগোপনে। কিন্তু হালে আবারও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গত ৭ জুলাই প্রথম বগুড়ায় অনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামে তারা। সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে তারা বগুড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তবে পুলিশ তাদের দলীয় ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি না দেওয়ায় মিছিল সমাবেশ করা হয়েছে ওলামা মাশায়েক পরিষদের ব্যানারে। সেই মিছিলের জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মিছিলে লোক সমাগম ছিল প্রচুর।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন নেতারা এখন ঘন ঘন বগুড়ায় আসছেন। চালাচ্ছেন নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা। বগুড়ার বিভিন্ন জেলায় এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর ভেতরে ভেতরে দলকে সংগঠিত করেছে। যদি তাদের দলের নিবন্ধন সরকার নাও দেয় তবে তারা স্বতন্ত্র বা ভিন্ন নামে অথবা কোনো দলের ব্যানারের আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় জামায়াত নেতারা জানান, তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশে এককভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে বহাল আছেন। ইতোমধ্যেই বগুড়ার ৫টি আসেন তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে বগুড়া-১ আসনের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, বগুড়া-২ আসনের সাবেক এমপি মাও: শাহাদাতুজ্জামান। তিনি ১৯৯১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বগুড়া-৪ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তায়েব আলী, বগুড়া-৫ আসনে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ দবিবুর রহমান, বগুড়া-৬ আসনে সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবেদুর রহমান। এরইমধ্যে তারাও ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।
জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দিনের বাড়ি সারিয়াকান্দিতে। তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে বগুড়া-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এরপর আর নির্বাচন করেননি তিনি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় জামায়াত। সেই নির্বাচনে মাওলানা শাহাদাতুজ্জামান এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে, সাতটিতে ভাইস চেযারম্যান পদে ও একটিতে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয় জামায়াত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় জামায়াতের মোট নেতাকর্মী রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। তার মধ্যে মহিলা কর্মী ২ হাজার। এ ছাড়াও শুধু বগুড়া শহরে ৫ হাজার নেতাকর্মী রয়েছে। এর মধ্যে মহিলা কর্মী রয়েছে ১ হাজার ৫০০। এই নেতাকর্মীরা অধিকাংশই ছাত্রশিবির ও ছাত্রী সংস্থার সাবেক নেতা ছিলেন।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবদুল মালেক জানান, আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে আমাদের দল নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা করছে। দল থেকে কোন আসনে কে প্রার্থী হতে পারেন, তার একটা প্রাথমিক তালিকা আছে। সেভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ ও সভা করায় জনগণ ও নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। জনগণ মুখিয়ে আছে আমাদের দিকে।
বগুড়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আলমগীর হুসাইন জানান, অনেক আগে থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জামায়াত। শুধু তাই নয় জামায়াত উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও এগুচ্ছে। তিনি নিজেও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রাথী হবেন।
সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের আগ্রহ কম। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার তাদের শীর্ষ নেতাদের বিনা অপরাধে ফাঁসি দিয়েছে। আবার ফাঁসি যখন দেয়া হয় তখন বিএনপি সামান্যতম প্রতিবাদ তো দূরের কথা নিন্দা কিংবা বিবৃতিও পর্যন্ত দেয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে যা সিদ্ধান্ত হবে তাই তারা পালন করবেন। তবে এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
মন্তব্য করুন