তীব্র গরমে অতিষ্ঠ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জনজীবন। গরমের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগবালাই। প্রচণ্ড গরমে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, ঠান্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা ও হিটস্ট্রোক। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
এ কারণে কুমারখালী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। শয্যা না পেয়ে মেঝেও থাকতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। তীব্র গরমে রোগীর বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় আড়াই গুণ। এক বেডে একাধিক রোগী গাদাগাদি করে থাকছেন। এতেও ঠাঁই না হওয়ায় বেশিরভাগের জায়গা হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। পর্যাপ্ত ফ্যান না থাকায় গরমে অতিষ্ঠ রোগীরা। গরম থেকে বাঁচতে নিজ বাসা বাড়ি থেকে ফ্যান নিয়ে এসেছেন অনেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বাড়তি রোগীর চাপে হাসপাতালে সিট খালি নেই। রোগীর শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতেও রোগীদের থাকতে হচ্ছে। হাসপাতালে বৃদ্ধ ও শিশু রোগী বেশি রয়েছে। গরমে জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রোগীর বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সাজেদা খাতুন ৮ মাসের জমজ বাচ্চার নিউমোনিয়ার সঙ্গে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি আছেন শিশু ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, তিন দিন আগে গরমে বাচ্চার নিউমোনিয়া নিয়ে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। একদিন পর শুরু হয় ডায়রিয়া। অসুস্থ বাচ্চা, প্রচণ্ড গরম আর হাসপাতালের গাদাগাদি পরিবেশে খুব কষ্টে আছি।
সাজেদা খাতুনের মতো একই অবস্থা কৃষক আব্দুল মালেকের। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে। প্রচণ্ড গরমে ধান কাটতে গিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হন তিনি। দের সপ্তাহজুড়ে চলমান তাপদাহে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতলে ভর্তি রয়েছে সাজেদা কিংবা মালেকের মতো দেড় শতাধিক মানুষ।
৮৬ বছর বয়সী মো. মনির উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছি। এই গরমে ঘাম হওয়ায় ঠান্ডা বেড়ে নিউমোনিয়ার মাত্রা বেশি হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে ফ্যান ও অন্যান্য সেবা না পাওয়ার কথাও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. শারমিন খাতুন বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়া, এজমা ও হিটস্ট্রোকজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। আমরা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ ও দিচ্ছি। যাতে তারা সুস্থ থাকার পাশাপাশি পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে।
কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. এস এম সাঈদ সাকিব কালবেলাকে বলেন, ঈদের সময় সর্বোচ্চ ৭০ জন রোগী ভর্তি হলেও বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, পর্যান্ত তরল খাবার গ্রহণ, ছাতা ব্যবহারসহ সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। এ ছাড়া হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদে না যাওয়াই ভালো।
মন্তব্য করুন