দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের দুঃখ কুমিরাঘাট। ঘাটের নানা অ্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে ইজারাদার আনোয়ার হোসেনকে ঘিরে আছে নানা সমালোচনা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে সম্প্রতি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সব আলোচনা ছাপিয়ে আনোয়ারকে ঘিরে নতুন আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে রঙিন পোস্টার ছাপানো নিয়েও। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সন্দ্বীপ উপজেলার অলিগলি ছেয়ে গেছে আনোয়ারের রঙিন পোস্টারে।
তাছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় সমর্থন না থাকার পরও সরাসরি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং কার্যালয় ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রঙিন পোস্টার ছাপানোর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে আনোয়ার হোসেনের পক্ষে সম্প্রতি উপজেলা ছাত্রলীগের ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরণে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। এমন বাস্তবতায় দলীয় পদ-পদবি ও নানা সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে আনোয়ারের পক্ষে কাজ করছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটি অংশ। এতে সন্দ্বীপ উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের প্যাড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তবে ২৬ এপ্রিল সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগ এই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এক জরুরি সভার আয়োজন করেছে বলে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিশ্চিত করেছেন।
অপর এক প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, পার্টির সেক্রেটারি ওবায়দুল কদের সাহেব বলেছিলেন দলের কোনো সাপোর্ট থাকবে না। কিন্তু আনোয়ার হোসেন সন্দ্বীপে দলের নাম ভাঙিয়ে ভোটের প্রচার চলছে।
রিটার্নিং অফিসার ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হক কালবেলাকে বলেন, নির্বাচনী প্রচার করছেন প্রার্থীরা। চেষ্টা করছি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট শেষ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এখনো পাইনি। তাছাড়া রঙিন পোস্টার ছাটানোর কোনো নিয়ম নেই। এমন কোনো অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রঙিন পোস্টার ছাপানোর বিষয়ে জানতে সন্দ্বীপ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের একটি বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ‘সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের’ এজেন্ডা ঠিক করা ছিল। উপজেলা কর্মীদের সভায় ডেকে আনোয়ার হোসেনের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভায় অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছেন।
এ দিকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও দলীয় কর্মীদের সরাসরি ব্যবহারের ফলে উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জাতীয় নির্বাচনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা।
তারা বলছেন- গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন শক্তিশালী প্রার্থী ঘিরে উত্তেজনা দেখা গেছে সন্দ্বীপজুড়ে। হামলা-মামলার পাশাপাশি প্রতিদিনই লেগে ছিল নানা বিশৃঙ্খলা। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এবারও ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল উপজেলা নির্বচানে প্রার্থী হতে চাওয়া আনোয়ার হোসেনের শুনানি সাময়িক স্থগিত করা হয়। জেলা পরিষদের বকেয়া পরিশোধ না করা, তথ্য গোপনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আপিলের পর আবারও নির্বাচনের মাঠে ফেরেন আনোয়ার হোসেন। প্রচার শুরুর পর এবার রঙিন পোস্টার ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।
মন্তব্য করুন