চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিষেধাজ্ঞা শেষে মধ্য রাতে নদীতে নামছে জেলেরা

নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামছে জেলেরা।  ছবি : কালবেলা
নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামছে জেলেরা। ছবি : কালবেলা

এক বুক স্বপ্ন নিয়ে মধ্য রাত থেকেই চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম শেষ হওয়ায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরার আশায় নদীতে নামবেন জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস অনেকটা অলস সময় কাটিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জেলা টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছে সম্মিলিত অভিযানে জাটকা প্রতিরোধ অনেকাংশ সফল হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর সদরের ইব্রাহীমপুর, লক্ষ্মীপুর মডেল, হানারচর ইউনিয়ন ও হাইমচর উপজেলার আলগী উত্তর ইউনিয়ন, মেঘনা পাড়ের জেলে পল্লীগুলোতে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে জেলেদের মাঝে উৎসবের আমেজ কাজ করছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১ মে মধ্যরাত থেকে আবারও নদীতে মাছ ধরার জন্য জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে নৌকা এবং জাল মেরামত শেষে বড় বড় ইলিশ ধরতে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে।

হাইমচর উপজেলার লামচরী গ্রামের জেলে সাদ্দাম মাল জানান, যখন আমি বুঝতে শিখেছি তখন থেকে মাছ ধরার কাজে জড়িত এবং এখন পর্যন্ত এই পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। আবার যখন মাছ ধরা শুরু হয় এর আগ থেকেই ঋণ করে বিভিন্নভাবে নৌকা মেরামত ও জাল ক্রয় করে নদীতে নামি। তবে ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি আল্লাহর ওপর। নদীতে নামলে অনেক সময় ইলিশ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়।

তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। যে কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। এ বছর ইটের ট্রলারে কাজ করেছি। সরকার জাটকা রক্ষায় যে অভিযান দেয়, তা আরও কঠোর এবং কারেন্টজালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। তাহলে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

সদর উপঝেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে সাইফুল ইসলাম, সফিক গাজী, মালেক শেখ। তারা নদীতে নামার জন্য জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা বলেন, দুই মাস মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকায় আমাদের সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ আমরা মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। যে কারণে ইলিশ পাওয়ার আশা নিয়ে এখন আবার জাল মেরামত করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তারা বলেন, আমাদের প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জন্য জেলে থাকে। ১২ জনের ১২ পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভালো চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। অনেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন।

হাইমচর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রশীদ জানান, জাটকার সবচাইতে বড় বিচরণ কেন্দ্র হাইমচর। এখানে কঠোর অভিযান হওয়ায় জেলেরা নদীতে নামতে পারেনি। বাইরের জেলেদের প্রতিরোধ করা হয়েছে। এর সুফল এ অঞ্চলের জেলেরা পাবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর চাঁদপুরের অভয়াশ্রম এলাকার জেলেরা সচেতন ছিল। যে কারণে বাইরের জেলেরা জাটকা নিধন করতে পারেনি। আমরা এখন জেলেদের বৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য উৎসাহ দিচ্ছি।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান দুই মাসের জাটকা রক্ষার অভিযান সম্পর্কে বলেন, এ বছর ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম এলাকায় ১০টি স্পিডবোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এ বছর রমজান মাসেও দিনরাতে নদীতে অবস্থান করেছে। রমজান মাসজুড়ে নদীতে ছিল আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তিনি বলেন, এ বছর জেলা টাস্কফোর্সের কঠোর অবস্থান থাকায় জেলেরা নদীতে নেমেছে কম। তারপরেও যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নেমেছে তার মধ্যে প্রায় ৩ শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি। দুই মাসে প্রায় ৫০ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্টসহ অন্যান্য জাল, ৩ টন জাটকা ও ৬০টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। আটক জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। জব্দকৃত নৌকাগুলো পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২ আগস্ট স্বজনদের যা করতে বললেন শেখ হাসিনা, জানালেন আলাল

কমিউনিটি ব্যাংকের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ট্রাম্পের গলফ ক্লাবের আকাশে অনধিকার প্রবেশ, তারপর...

যশোরে বাস-ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

‘জামায়াত ক্ষমতায় এলে জুলাই শহীদদের জাতীয় মর্যাদা দেওয়া হবে’

শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিও চিন্তা করে যুক্তি দিয়ে

শাহবাগে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ‘রাজনৈতিক মব’ হয়েছিল

আবারও ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ইসরায়েলি বিমানবন্দর বন্ধ

‘বিএনপি নির্বাচিত হলে প্রতিটি ঘরে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে’

দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দগ্ধ রোমের দুই পুলিশ

১০

এক দেয়াল ও ১৪ দরজা-জানালা রং করতে ৬৫৮ মিস্ত্রি!

১১

এনসিসি জাতীয় কোনো ধারণার সঙ্গে একমত হইনি : সালাহউদ্দিন

১২

সাদিয়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে পারভেজ মল্লিক

১৩

‘জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামীতে কাদের সেবা করার সুযোগ দেবে’

১৪

শহীদ শিশু রিয়া গোপ হত্যার বিচারের আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার

১৫

পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে শিক্ষকদের পরামর্শ চাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১৬

ঢাবির হল থেকে ছাত্রলীগ নেতা আটক 

১৭

বিএনপি নেতা প্রকৌশলী সেলিমের নেতৃত্বে ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

১৮

মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক

১৯

শেষ ওয়ানডের আগে শঙ্কায় শান্ত

২০
X