শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ০৮:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গারো পাহাড়ের সবুজ বনে জ্বলছে আগুন!

দিনের বেলায় আগুনে জ্বলছে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। ছবি : কালবেলা
দিনের বেলায় আগুনে জ্বলছে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। ছবি : কালবেলা

ভারতের সীমান্তঘেঁষা উত্তরের জনপদ শেরপুর জেলার তিনটি উপজেলায় বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে বনভূমি। গারো পাহাড়ের এই বনভূমির বিভিন্ন জায়গায় দিনে ও রাতে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বনের অন্তত ১৫টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাহাড়ের পর পাহাড় আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে শুধু বিভিন্ন গাছ-পালা ও প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণাগুণ, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতিও।

অভিযোগ উঠেছে, বেশ কয়েকটি চক্র আগুন জ্বালানোর পেছনে কাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে আগুন দিয়ে রাতের অন্ধকারে বনের মূল্যবান গাছ চুরি করছে একটি চক্র। পাশাপাশি অসাধু বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা অসৎ উদ্দেশ্যে বনের ভেতর আগুন দিয়ে ভীতির সৃষ্টি করছে। আবার বনের জমি দখল ও লাকড়ি সংগ্রহ করতেও দুর্বৃত্তরা আগুন দিচ্ছে।

এ ছাড়া আগুনের ঘটনায় নতুন গজিয়ে ওঠা চারাগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বনের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকিতে পরতে পারে বলে মনে করেন তারা। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত সুফল বাগানের কোনো ছোট গাছই আর তেমন নেই। এই তিনটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন পোড়ানোর ঘটনা ঘটছে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জ এলাকায়।

গত শুক্রবার জেলার সীমান্ত সড়কের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকার গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চারটি স্থানে বড় আকারে আগুন জ্বলছে। আবার দুটি স্থানে অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। স্থানীয়রা বলেন, কে বা কারা ঘণ্টাখানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে এ বন পোড়ানো হয়। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ (শালকপিচ), ঝুপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেচু ও কীটপতঙ্গসহ বহু অজানা বিভিন্ন প্রাণী। আগুনের ফলে নতুন করে হচ্ছে না কোনো গাছ। বিনষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। বন পোড়ানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি। গারো পাহাড়ে বশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা সমৃদ্ধ রয়েছে বন। প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্য সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেয়। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বন পোড়ানো।

বন বিভাগ জানায়, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় ৩টি বিট কার্যালয় রয়েছে। এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা সমৃদ্ধ বন রয়েছে। প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা। তবে বিশাল এই বনাঞ্চল রক্ষার্থে নেই পর্যাপ্ত জনবল।

স্থানীয় শিক্ষক রহমত আলী বলেন, শুস্ক মৌসুমে বনের ঝরা শুকনো পাতায় প্রতিবছরই এমন আগুনের ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যে বিট কার্যালয়ের আশপাশের বনেও আগুন জ্বলতে দেখি। এরপরও এসব বন্ধের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে থাকলে বন ধ্বংস হবে একদিন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কঠোর নজরদারি বাড়িয়ে দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনা হোক।

বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি ঝিনাইগাতী শাখার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেমন বন দরকার, গাছ দরকার। তেমনি বন বাঁচিয়ে রাখতে বনের প্রাণী ও গাছ দরকার। এভাবে আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। তভুও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। আমরা এর সমাধান চাই।

পরিবাশবাদী যুব সংগঠনের সভাপতি কবি ও সাংবাদিক রফিক মজিদ বলেন, এই বন ও বনের প্রাণী রক্ষায় আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করি। সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করি। এ ছাড়াও আমরা মানববন্ধন, প্রতীকী অনশনসহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবাই নির্বিকার। আমরা আমাদের গর্বের সম্পদ এই গারো পাহাড়কে রক্ষায় স্থায়ী সমাধান চাই।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, এ সময়টাতে বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রুতই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এক জায়গা আগুন নেভাই, পরে শুনি আরেক জায়গায় আগুন। আমরাও পড়ে গেছি মহা বিপদে। কারণ, আমাদের জনবল খুবই কম, এই কম জনবল দিয়ে এত বড় পাহাড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা কঠিনই হয়ে পড়েছে। তবে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে পাহাড় রক্ষার কাজ করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওসি জাহাঙ্গীরের চাঁদার টাকা রফাদফার ভিডিও ভাইরাল

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো মিডিয়া সামিট 

কানাডা ও জাপান সফরে গেলেন গণপূর্তমন্ত্রী

ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে ভয়ংকর তথ্য

মহাসড়কে অভিযান / বগুড়ায় ১৪ গাড়ি থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে নিল পুলিশ

স্কুল ব্যাগে মিলল ৫২০০ পিস ইয়াবা, যুবক গ্রেপ্তার

ডিবিতে মামুনুল হক

পার্লামেন্টে এমপিদের মধ্যে তুমুল মারামারি

ঢাবি জাতীয় ছায়া জাতিসংঘ অধিবেশন ৩০ মে শুরু

নোয়াখালীতে পাওয়ার টিলারের চাপায় স্কুলছাত্র নিহত

১০

বিএনপি একটা জালিয়াত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১১

ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরে দাঁড়ালেন ২ প্রার্থী

১২

শতভাগ ফেল করা চার মাদ্রাসাকে শোকজ

১৩

এক্সিকিউটিভ পদে বসুন্ধরা গ্রুপে নিয়োগ, কর্মস্থল ঢাকা

১৪

হুটার-হাইড্রোলিক হর্ন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

১৫

গোয়াল ঘরে ঝুলছিল বৃদ্ধের মরদেহ

১৬

লোকসভা নির্বাচনে কোন দলের নারী প্রার্থী কত?

১৭

‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ বাস্তবায়নে আরএমপি

১৮

যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত পুলিশ : আইজিপি

১৯

প্লে-অফে যেতে কোহলিদের বাধা বৃষ্টি  

২০
X