মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মাপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। প্রায় এক মাস আগে নদীতে জোয়ারের পানি আসতেই কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কোটকান্দি থেকে মালুচী ঘাট এলাকায় তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন শুরু হয়। এতে বেশকিছু ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়েছে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বসতবাড়িসহ গাছপালা।
রোববার (১২ মে) বিকেলে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে জোয়ারের পানির তীব্র স্রোত আর ঢেউ আঘাতে নদীর তীরে ধসে পড়ছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যজুড়ে ফাটল ধরেছে।
মালুচী গ্রামের বাসিন্দা গোপাল সরদার কালবেলাকে বলেন, আমার বাড়ি এক ভাঙনে চলে গেছে। এখন আছি পদ্মা পাড়েই। কখন জানি এটুকুও চলে যায়। গত ২০/২৫ দিন আগে পানি বাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে আবার ভাঙন শুরু হইছে। তবে ২/৩ দিন ধরে পানি কমতে থাকায় আপাতত ভাঙতেছে না। পানি বাড়া শুরু হলে আবার ভাঙন শুরু হবে। সামনে চর পড়ার কারণে তীরে গভীরতা বেশি। তাই স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতটা বেশি লাগে। তাই ভাঙনও দেখা দেয়। এখানে আগে কখনো জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি। তাই দ্রুত জিও ব্যাগ না ফেললে এ রাস্তাসহ পুরোটাই বিলীন হয়ে যাবে।
একই গ্রামের নোয়াব আলী বলেন, কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়েছে। আর শিবালয়ের শেষ সীমানা মালুচী ঘাটের পশ্চিমে জিও ব্যাগ পড়েছে। মাঝের এ জায়গাটুকুতে এখনও জিও ব্যাগ পড়েনি। কয়েকদিনে জোয়ারের পানি আসতে শুরু করায় এ এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এখানে পানির গভীরতাও বেশি। তাই এখনই ভাঙনরোধ করা না হলে পানি বাড়া শুরু হলেই বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে। কয়েক জায়গায় লম্বা হয়ে জমিতে ফাটল দেখা দিছে। পানি বাড়লেই এসব জমি নদীতে ধসে পড়বে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, কোটকান্দি ওসমানের বাড়ি হতে মালুচি ঘাট পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এখনও কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কোটকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগ নিয়েও নদীতে ধসে পড়ছে। আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের ভাঙন দিতে পারে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট কোটকান্দি থেকে মালুচি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার, কাঞ্চনপুরে আরও ৫০০ মিটার এবং আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলে ৫০০ মিটার করে মোট ২৭০০ মিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর জন্য মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর বাজেটের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বাজেট অনুমোদন পেলেই আমরা এসব এলাকায় কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি বলেন, আমাদের যে পরিমাণ চাহিদা সে অনুযায়ী বাজেট খুবই সীমিত। তাই আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারি না।
এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নর কয়েক হাজার মানুষ নদীভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছরে এ উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা কাজে শতশত কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন