জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণ করছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), রাজশাহী। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সম্প্রতি সেখানে চাঁদা না দেওয়ায় নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এই নিয়ে থানায় একটি জিডিও করেছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ।
থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহীর অফিস ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পরিচালন ব্যয় খাতের আওতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণকাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। ৭৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কাজে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার কনস্ট্রাকশন।
রোববার (২৬ মে) সকাল ১১টার সময় দল বেঁধে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন মধ্য বয়সী যুবক অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর (আনসার) নির্দেশনা অমান্য করে জোর করে অফিসের প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণ’ সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। এ ছাড়াও কাজ বন্ধ রাখার জন্য হুমকি প্রদান করেন। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য বাস্তবায়নাধীন কাজে নিয়োজিত ৩০-৪০ জন শ্রমিক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সারা দিন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হন। এ ছাড়াও কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারি কাজ বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক খন্দকার হাসান করিব দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান রোটন বলেন, কাল ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা ছিলাম না, তবে পরে জেনেছি। এ ঘটনায় আমাদের ঠিকাদার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা মূলত চাঁদা দাবি করেছিল। তাদের না কি চাঁদা না দিলে ম্যুরাল বানাতে দিবে না, এমন একটি কথা শুনেছি। তার সাত দিন আগে অফিসেও আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এটা মেনে নেওয়া যায় না, একটা স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল তারা হতে দিবে না- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। এর সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। এ ঘটনার পর থেকে আমাদের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখন অফিস কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি মেনে আমরা কাজ শুরু করব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে রাজশাহীর উপসহকারী প্রকৌশলী সুকেশ কুমার বলেন, রোববার তারা জোর করে অফিসে প্রবেশ করে। এ ছাড়া কাজ বন্ধ করতে বলেন। আমরা তখন বাইরে সাইট ভিজিটে গিয়েছিলাম। পরে আমরা আসার পর তাদের পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিকরা সারা দিন আর কাজ করেননি। গতকাল কাজ বন্ধ ছিল। এটি নিয়ে থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। তবে আজ সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ আছে।
তবে কাজটির তত্ত্বাবধানে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে রাজশাহীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রিফাত করিমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে তাদের না কি সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু আজ কাজ শুরু হয়েছে কি না সেটি আমি জানি না। এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, স্বাধীন রাষ্ট্রে এমন কাজ অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখছি। এটা যারা করছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করছি।
মন্তব্য করুন