এখন সময় সোনালু ফুলের। পথে-প্রান্তরে গাছে সোনালি আভায় ফুটেছে সোনালু। সবুজ পাতা ঢেকে দিয়ে সোনারাঙা ফুলে সেজেছে সোনালুগাছ। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার পথে-প্রান্তরে ফুটেছে সোনালু ফুল। সোনালু গাছের হলুদ ফুল প্রকৃতিকে নতুন রূপে রাঙিয়ে তোলে।
এ ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য রাস্তায় চলাচলে পথিকের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। প্রখর রোদে বিরূপ আবহাওয়ায় হলুদ ফুলের চোখজুড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করতে, ছবি তুলতে সোনালু গাছের নিচে ভিড় জমান তরুণ-তরুণী থেকে নানা বয়সের মানুষ।
দিনাজপুরের বিরামপুরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার পথেঘাটে, গ্রামেগঞ্জে, গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় সোনালু ফুল। যার অপরূপ সৌন্দর্যে আলোকিত চারপাশের পরিবেশ। সোনালুর দোল দেখে মনে হয় এ যেন প্রকৃতির হলুদাভ উষ্ণ অভ্যর্থনা। এ ছাড়া বিরামপুর-ফুলবাড়ী সড়কে রয়েছে বেশ কয়েকটি সোনালু গাছ। হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে এখানকার প্রকৃতি।
বাংলাদেশ, ভারতসহ পূর্ব এশিয়ায় এ গাছটির দেখা মেলে। সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও সোনালুগাছের পাতা ও বাকল বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন। সোনালুর ফল লাঠির মতো গোল ও আকারে বেশ লম্বা হয়। গাছটি ১০ থেকে ২০ মিটার উচ্চতার হয়। এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি।
রামসাগর এলাকায় সোনালু ফুলের সৌন্দর্য উপভোগে আসা তরুণী লাবনী খাতুন বলেন, সোনালু গাছ আগের চেয়ে কমে গেছে। রামসাগর এলাকায় ফুটে থাকা সোনালু ফুলে মুগ্ধ সবাই। সোনালু ফুল খুব সুন্দরভাবে রং ছড়ায়। যা দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। কারণ ছোটবেলায় এ ফুল দিয়ে অনেক মালা তৈরি করে সাজগোজ করেছিলাম। এখন এ ফুল কম দেখতে পাওয়া যায়।
হাকিমপুর স্টেশন চত্বর এলাকার বাসিন্দা পরিমল কুমার মন্ডল বলেন, সোনালু ফুল দেখে অনেকের মনে প্রশান্তি আসে, কিন্তু কালের বিবর্তনে এ গাছগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্ত প্রায় এ গাছ নতুন করে লাগানো প্রয়োজন এবং যে গাছগুলো এখনো টিকে আছে, সেগুলোর প্রতি যত্ন নেওয়া উচিত। তা না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে এটা শুধু গল্পের মতো মনে হবে।
উপজেলার চরকাই রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বলেন, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এ ফুলের নাম দিয়েছেন অমলতাস, ইংরেজিতে এর নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। গাছের বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জুরি হলুদ ফুল। এ গাছের আদি নিবাস ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। এর ফুল, ফল ও পাতা বানরের খুবর প্রিয়। সোনালু কাঠের রং লাল। ঢেঁকি ও সাঁকো বানানোর কাজে এ কাঠ ব্যবহার করা হয়।
বিরামপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ইলিয়াস বলেন, সোনালু গাছের অনেক ঔষধি গুণাগুণ আছে। এ গাছের বাকল ও পাতা ব্লাড প্রেশারের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সোনালুর ফল সহায়তা করে।
দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের সহকারী বনরক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, রামসাগর যাওয়ার রাস্তার দুই পাশে, কৃষি অফিসের সামনে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেশ কিছু সোনালু ফুলের গাছ দেখা যায়। গাছগুলো পরিবেশের জন্য উপকারী। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এর ফুল চমৎকার ও দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় শোভাবর্ধনকারী হিসেবে সবার কাছে জনপ্রিয় এবং এ গাছ থেকে ভালো মানের কাঠও পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, সোনালু ফুলের বাকল ও পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতা অ্যান্টিব্যাকটোরিয়াল ও অ্যান্টি অ্যাক্সিডেন্ট গুনসম্পন্ন। এটি ডায়রিয়া, বহুমুত্র, লিভার, অরুচি, যক্ষ্মা, আমবাত, গিটে ব্যথা, বৃদ্ধকালের কোষ্ঠকাঠিন্য, কোনো জায়গা কেটে, কুষ্ঠে ক্ষতে, ফিস্টুলা বা ভগন্দরসহ অন্যান্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
মন্তব্য করুন